বগুড়া প্রতিনিধি : মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়েছিল বগুড়া। গোটা শহরজুড়ে নেতাকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বুধবার বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শুধু জেলাবাসী নয় অভিভুত কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ।

দীর্ঘ ১০ বছর পর জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বুধবার জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাজসাজ রব বগুড়ার রাজনৈতিক পাড়ায়। দলীয় নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার এবং ফেস্টুনে ঢেকে গেছে গোটা শহর। সকাল ১১ টায় জিলা স্বুল মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চে আসেন দুপুর পৌনে একটায়।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীরা জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এর আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয় সম্মেলন স্থলে। বর্নাঢ্য আয়োজনে নেচে গেয়ে নেতাকর্মীরা সম্মেলনে যোগদান করেন। বেলা ১১ টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ন হয় জিলা স্কুল মাঠ। হাতিতে চড়ে বিশাল র‌্যালীসহ সম্মেলন স্থলে আসেন বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক ও সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ। নেতাকর্মীসহ শহরবাসী এসময় তাদেরকে স্বাগত জানায়। বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগ আহবায়ক রফি নেওয়াজ খান রবিনের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা, গাবতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এএইচ আজম খান ও গাবতলী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোমিনুল হক শিলুর নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সারিয়াকান্দি উপজেলা আ’লীগ সভাপতি সাহাদারা মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমনের নেতৃত্বে উপজেলা নেতাকর্মীরা, কাহালু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আজিজুল হকের নেতৃত্বে বিশাল মোটর সাইকেল বহর নিয়ে সম্মেলন স্থলে আসে উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যান্য উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা সম্মেলনে মিছিল সহকারে যোগদান করেন। আওয়ামীলীগের সহযোগি সংগঠনের জেলা কমিটির নেতাকর্মীরাও এ সম্মেলনে যোগদান করে। জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় এর নেতৃত্বে জেলা যুবলীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আসাদুর রহমান দূলুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকলীগ, জেলা শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলালের নেতৃত্বে শ্রমিকলীগ, আল রাজি জুয়েল ও মাশরাফি হিরোর নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সম্মেলন স্থলে আসেন। এছাড়া জেলা কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, যুব মহিলালীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ,স্বাধীনতা হোমিও চিকিৎসক পরিষদ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ নেতাকর্মীবৃন্দ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা শহর নেতাকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। জিলা স্বুল মাঠে জায়গা না হওয়ায় শহরের প্রাণকেন্দ্র গোটা সাতমাথায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সাতমাথা থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। বেলা দেড়টায় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষনা করেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতি হওয়ায় তিনি জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিনসহ নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান। আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিশাল এ সম্মেলনে অভিভুত। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্মেলনে গিয়েছেন তবে বগুড়া জেলার ন্যায় বিশাল সমাবেশ আর কোথাও হয়নি। তিনি নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। অপর যুগ্ম সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সম্মেলনে নেতাকর্মী, কাউন্সিলর, ডেলিগেট উপস্থিতিতে এখন পর্যন্ত যতগুলো সম্মেলন হয়েছে এর মধ্যে বগুড়া সেরা। জাতীয় নেতৃবৃন্দ বগুড়ায় বিশাল সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সবার প্রতি অভিনন্দন জানান। সম্মেলনে বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষনার জন্য দাবী জানান এমপি আব্দুল মান্নান, রাশিক এর সাবেক মেয়র এ এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। সম্মেলনে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানান সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে গোটা শহর জুড়ে টানানো হয়েছিল ডিজটাল ব্যানার। শহরের প্রবেশদ্বার বনানী ও মাটিডালীতে বিশাল আকৃতির ব্যানার টানিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক ও সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ। তারা বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষনার দাবী জানান ব্যানারে। বনানী থেকে শহর অভিমুখে রাস্তাসহ সাতমাথা এলাকায় সরকারের উন্নয়নমূলক চিত্র তুলে ধরে বিশাল আকৃতির ডিজিটাল ব্যানার টানিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বগুড়া পৌর আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক সুলতান মাহমুদ খান রনি। এছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের টানানো ডিজিটাল ব্যানারে বদলে গেছে শহরের চেহারা। এক নতুন সাজে সেজেছিল বগুড়া শহর।

(এএসবি/অ/ডিসেম্বর ১০, ২০১৪)