মদন (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও পৈত্রিক ভিটায় আজও একটা ঘর নির্মাণ করতে পারিনি। অন্যের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। পৈত্রিক ভিটায় একটা ঘর নির্মাণ করে মরতে পারলে আর কোন দুঃখ থাকত না। এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে এমনই আক্ষেপের কথা জানালেন নেত্রকোনার মদন উপজেলা সংলগ্ন আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের করারধূপ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ. হাই।

কথায় কথায় আরও জানালেন, ১৯৭১ সালে পরিবার পরিজন ফেলে দেশ মাতৃকার টানে আনসার ভিডিপির চাকুরী ছেড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ১১নং সেক্টরে কমান্ডার লতিফ মোল্লার তত্ত্বাবধানে এলএমজি নিয়ে যুদ্ধ করেন। শ্যামগঞ্জ পুরাতন বাজারে পাকবাহিনীর সাথে তিনিসহ ৩৭জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে সুধীর বড়ুয়া নামে একজন শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আ. হাই। মুক্তিযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ১৯৭২ সালে তাঁকে নেত্রকোণা মহকুমার কার্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষর করা ৫শ টাকার চেক দেয়া হয়। স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার তার। পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কোন সহায় সম্বল নেই। অভাব অনটন তার নিত্য দিনের সঙ্গী।

সংসারের ৬ সদস্যের খাদ্য জুগিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে গিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন। বয়সের ভারে কোন কাজ করতে না পারায় দিন দিন বাড়ছে তার ঋণের বোঝা। সরকার প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও তা সন্তানদের লেখাপড়ার পিছনেই ব্যয় হয়ে যায়। আ. হাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়েও আজ বার্ধক্যের ভারে অক্ষম হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা আ. হাই একান্ত সাক্ষাতকারে আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘বাবা, এখন যদি আমি পঙ্গু হতাম তাহলে আরেকটা ভাতা বেশি পেতাম। আর পারছি না জীবন যুদ্ধের নৌকা চালাতে। এখন শুধু একটাই ইচ্ছা আশ্রিত না হয়ে পৈত্রিক ভিটায় নিজ ঘরে মরতে চাই।’ এ ব্যাপারে তিনি প্রধান মন্ত্রীসহ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

(এএমএ/এএস/ডিসেম্বর ১১, ২০১৪)