আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর রাজাকার ও তার দোষরদের বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তি যখন ঐক্যবদ্ধ তখন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সিংহদ্বারখ্যাত ৯ নং সেক্টরের অধীন গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সেকাল-একাল নিয়ে বৃহত্তর বরিশাল এলাকার শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে উত্তরাধিকার’৭১ নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কেএম শামসুর রহমান। তার ধারাবাহিক বর্ণনা পাঠকদের উদ্দেশে  তুলে ধরা হল-

১৯৭১ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের কথা মনে পরলে স্মৃতির পাতায় জেগে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সর্বশেষ পাকবাহিনী গৌরনদীতে আত্মসমর্পন করে ২২ ডিসেম্বর। আগৈলঝাড়া থানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে দুই এলাকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হত আগৈলঝাড়াবাসীর মাধ্যমে গৌরনদী থেকে। ৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর এই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের আবহাওয়া বইতে শুরু করে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন নেতা মরহুম মতিউর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে গৈলা স্কুল মাঠে শাহ সেকেন্দার এবং আগৈলঝাড়ায় আ. খালেক পাইকের নেতৃত্বে সাধারন জনগণ সংঘটিত হতে থাকে।

অন্যদিকে, বারপাইকায় কুদ্দুচ শাহর নেতৃত্বে অনুরূপ প্রশিক্ষণ চলে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকসেনাদের সহযোগীতা করার জন্য গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় গঠণ করা হয় শান্তি কমিটি। তৎকালীন গৈলা ইউপি চেয়াম্যান ও মুসলিমলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন মুন্সি সভাপতি ও মুন্সি নজিবুর রহমান ওরফে নাজেম মুন্সি হলেন সদস্য সচিব। শান্তি কমিটির অপর প্রভাবশালী সদস্য হলেন নাজেম মুন্সির জামাতা মুসলিমলীগ নেতা মাওলানা শিহাব উদ্দিন। রাজাকার কমান্ডার হলেন, গৈলার উমর আলী ও ফুল্লশ্রী গ্রামের নজর আলী ফকির। এরা প্রথমে পশ্চিম সুজনকাঠী গ্রামের শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্রকে হত্যা ও গুম করে পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে নিজেদের জানান দিয়ে নিজেদের আসন পোক্ত করেন। এক মাস পর এপ্রিলের শেষের দিকে কাঠিরা গ্রামে ওমর আলী ও নজর আলীর নেতৃত্বে ১শ ৫০ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে অগ্নি সংযোগ করা হয় ওই গ্রামে। মে মাসে বাকালে ইঞ্জিনিয়ার সুরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জীকে নজর ও উমর আলীর নেতৃত্বে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। অনুরূপভাবে হত্যা করা হয় “দি রয়েল বেঙ্গল সার্কাস” এর স্বত্বাধিকারী লক্ষ্মণ দাসকে তার হাতি সহ কোদালধোয়া গ্রামে। হত্যার পাশাপাশি গৃহবধু ও যুবতী মেয়েদের ধরে গৌরনদী ক্যাম্পে (বর্তমান সরকারি গৌরনদী কলেজ) পাকিস্তানী সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য পৌছে দিত তারা। পাক ক্যাম্পের অদূরেই হাতেম ফকিরের ঘাটে হত্যার পর অসংখ্য লাশ ফেলে দেয়া হত খালের স্রোতে। রাজাকার ওমর ও নজর আলীর বিভৎস কার্যকলাপের কথা মনে পরলে এখনো ঘুমাতে পারি না।

আগৈলঝাড়ার উত্তর এলাকার রাংতা গ্রামের আউয়াল গড়ে তোলে তার নিজস্ব রাজাকার বাহিনী। তার নেতৃত্বে গৌরনদী থেকে সেনাদের পথ দেখিয়ে এনে স্থানীয় কেতনার বিল নামক স্থানে পাকিস্তানী সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে কমপক্ষে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করে, যারা পশ্চিম বিল এলাকায় বাঁচার জন্য আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছিলেন। ওই এলাকার পাত্র (এক জাতি গোষ্ঠি) বাড়িতে এখনো গণকবরে হাড়গোর পাওয়া যায়। একই দিন আউয়ালের নেতৃত্বে রাজিহার খ্রীষ্টান বাড়িতে ৭ জনকে এক দড়িতে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও রাজিহার, বাকাল, ফল্লশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাজাকার বাহিনী তাদের কার্যকলাপে ছিল সক্রিয়। উল্লেখিত রাজাকাররা তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আজিজ দাড়িয়ার নিকট গৌরনদী মুক্ত দিবসে গৌরনদী ক্যাম্পেই আত্মসমর্পণ করে। পরে হেমায়েত বাহিনীর যোদ্ধা সন্তোষ কুশারীর নেতৃত্বে আফতাব মুন্সিকে নিজ বাড়িতে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তাদের প্রেত আত্মারা এখনো ভর করে আছে স্বাধীন বাংলাদেশের উপর। ওমর ও নজর আলীকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্লেড দিয়ে কেঁটে গায়ে লবন ছিটিয়ে দেয়। আত্মসমর্পণকারীরা জেল জীবন থেকে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পায়। সারাদেশে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় হলেও গৌরনদী মুক্ত হয় ২২ ডিসেম্বর।

এবার মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পনের পালা। নৌ-বিমান, সেনা, ইপিআর, পুলিশবাহিনী সহ চাকুরীজীবি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, সবাই যার যার স্থানে চলে গেলে শুধু বেকার যুবক, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র তাদের জন্য বরিশাল সদর (উঃ) মহাকুমার ন্যাশনাল মিলিশিয়া ক্যাম্প গৌরনদীর কসবায় স্থাপন করা হয়। মহাকুমার সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যারাক বানিয়ে সংগঠিত করে রাখা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের দ’ুমোঠ ভাত ও নিরাপদ রাত যাপনের ব্যবস্থা হয়, ক্যাম্পে কমান্ডার ছিলেন নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ। কোরবানীর ঈদের পর হঠাৎ একদিন ঘোষণা আসল বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন। যার ডাকে সারা দিয়ে গ্রামের ছাত্র যুবক তরুণ যারা রাজনীতি জানতেননা বা বুঝতো না তারাও অস্ত্র হাতে নিয়ে ৯ মাস অর্ধাহারে-অনাহারে বস্ত্রহীন অবস্থায় হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ শ্রষ্ঠার ভাষণ নিজ কানে শোনা চাই। ক্যাম্পে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধাগণ রেডিওর কাছে ভীড় করে বসে আছেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বললেন, “আগামীদিন থেকে আর মিলিশিয়া ক্যাম্প চালু থাকবে না। যে যার কর্মস্থলে চলে যাও।”

এমনকি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা রাজাকারদের তালিকাটি করার কোন উদ্যোগ তিনি নিতে বললেন না। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেল নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে। কাজ নেই, পেটে ভাত নেই, বেকার সবাই। পেটের ভাত জোগাড় করতে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বিপদগামী হয়ে চুরি ডাকাতি করতে লাগল। কিন্তু তাদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েক জন। তবুও চারদিকে ঢোল হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধারা ডাকাতি করে। এতে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করতেন। মিলিশিয়া ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না হওয়ায় সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের উপর কুফল হল মুক্তিযুদ্ধের সেনা প্রধান এমএজি ওসমানী সার্টিফিকেট ও মুজিব বাহিনীর তোফায়েল আহম্মদের স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট টাকায় কেনা বেচা হতে লাগল। অনেক অমুক্তিযোদ্ধা যারা মিলিশিয়া ক্যাম্পে অবস্থান করেনি, তারাও ওই সনদ কিনে নেয়, যদি ভবিষ্যতে কাজে লাগে। এমনকি অর্থের বিনিময়ে রাজাকারের ঘরেও সে সার্টিফিকেট পৌছে গেল। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভে ৯ নং সেক্টর কমন্ডার মেজর এমএ জলিলের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জাসদ) যোগ দিলেন। কিছু দিনের মধ্যেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সৃষ্টি করা হয় জাতীয় রক্ষীবাহিনী। আর এ বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যে নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র পাঠ করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। সেই জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করায় মুক্তিযোদ্ধারা ভাবল তাদের এক সহযোদ্ধা ভাই ক্ষমতায় এবার হয়তো তাদের কোন একটা উপকার হবে। কাজটি হয়েছে তার উল্টো। তখন অনেক নিবেদিত মুক্তিযোদ্ধাকে গৌরনদী ক্যাম্পে নিয়ে মিথ্যা ডাকাতির অজুহাতে অস্ত্র আছে এই বদনাম দিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যতনের ভয়ে অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে যায়, অনেকে যায় কারাগারে। জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করার উদ্যোগ নিলেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তার উপর বিশ্বাস না রাখার কারণে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধারা তার ডাকে সাড়া দেয়নি এবং তালিকাভুক্ত হয়নি। সে তালিকার নাম “জাতীয় তালিকা”।
আবার দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধান ব্যক্তির পদে রদবদল হলো। ক্ষমতায় এলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখতে সক্ষম হননি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধ স্ব-চোখেও দেখেননি। তিনি তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি লেফট. জে. হোসাইন মোহম্মাদ এরশাদ। তিনি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম “বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান” বলে ঘোষণা দিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার নির্দেশ দিলেন। সে সময় তালিকানুযায়ী আগৈলঝাড়া উপজেলায় মাত্র ২২ জন মুক্তিযোদ্ধাই সঠিক ফরম পূরণ করে তালিকা ভুক্ত হয়েছিলেন। তবে ওই তালিকায় ৩ জন ছিলেন ভূঁয়া। তালিকাটির নাম হল “মুক্তিযোদ্ধা ভোটার তালিকা”। বর্তমানে সরকারী গেজেটেড ৫০৫শ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি নন গেজেটে আরও ১শ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় রয়েছে। এত মুক্তিযোদ্ধার পরেও এখনো অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। আগৈলঝাড়ায় ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫০৫ জন।

১৯৯৬ সাল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আবারও পরিবর্তন হলো। ক্ষমতায় এলো আওয়ামীলীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধ ুকন্যা শেখ হাসিনা। মুজিব সন্তান হিসেবে মুজিব অনুসারীদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনায় এনে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রনয়নের উদ্যোগ নিয়ে তালিকা হওয়ার আগেই ঘোষনা দিলেন (১) অসচ্ছল-অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, (২) মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাকুরী কোঠায় ৩০% সংরক্ষণ (৩) মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন।

তালিকা তৈরির পূর্বেই লোকজন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ফরম পূরণ করা শুরু করে। কেনা সাটিফিকেট দাখিল করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকেই নিজেদের বড় যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে দাবী করেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি অথবা ওই সময় তার হাটার বয়স হয়নি এমন এক অ-মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযোদ্ধার দাবী সম্বন্ধে তিনি বলেন, “যাচাই বাছাইয়ের দিন ওই নালায়েক ব্যক্তিকে কমিটির সদস্যরা জিজ্ঞাস করলেন, -আপনি কি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞাস করা হল- আপনি কোন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন রাইফেল দিয়ে। তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো কোন ধরণের রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ করেছেন? এবার তিনি উত্তর দিলেন মেজো রাইফেল দিয়ে।” পাঠক বুঝে নিজ বিচারে বুঝে নেবেন তিনি কোন ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধা ? তার যুদ্ধ করার কথা শুনে ঢাকা থেকে আগত যাচাইকারী কমিটির মুক্তিযোদ্ধাগণ আপনার মতই হোঁ হোঁ করে হেসে দম ফাটিয়েছিলেন। এর ফাঁকেও অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেন। এমনকি রাজাকারের পরিবারের সদস্যরাও অন্তভূক্ত হলেন ওই তালিকায়। অনেক অমুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করে ফেললো মুক্তিযুদ্ধকালীন স্থানীয় কমান্ডারদের সনদপত্র। তাদিয়ে যে তালিকা হল তার নাম “মুক্তিবার্তা”।

আগৈলঝাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হাতে এ তালিকা পৌছানোর পর অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধার নাম ওই তালিকায় জ্বল জ্বল করে উঠল। এ নিয়ে অনেকে হৈ চৈ, পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হল। অনেক দেন দরবারের পর কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আবার নির্র্দেশ দিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চুড়ান্ত যাচাই বাছাই করে অ-মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। পুন:চুড়ান্ত যাচাই বাছাই হলো বটে। অ-মুক্তিযোদ্ধাদেরও চিহ্নিত করা গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাষ্ট্র্রীয় ক্ষমতায় আবার পরিবর্তন। ক্ষমতায় এলেন এক মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য-দেয়া অর্থকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা নাম দিলেন। ভাতার পরিমাণ পূর্বের ৩শ থেকে ৫শ টাকায় উন্নীত করলেন। কিন্তু তিনিও অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বাতিল করলেন না বরং তার দলীয় অ-মুক্তিযোদ্ধা লোকদের তালিকাভুক্তির সুবিধা করে দিলেন। বিএনপি সরকার শুধু “এক তালিকাভুক্ত” মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাতিলের নির্দেশ দিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিপন্থি এ নির্দেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বরিশাল জেলা মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার, আগৈলঝাড়ার বাগধা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মিয়া হাইকোর্টে একটি রিট করেন। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে, দেশব্যাপী তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। এতে সারা বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা উপকৃত হয়। আগৈলঝাড়া সহ দেশের সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিপ্লবী নেতা হিসেবে তিনি স্মরণীয়।

শামসুর রহমান আরও বলেন, - আগৈলঝাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইতিহাস পাল্টা পাল্টি ক্ষমতার ইতিহাস। আগৈলঝাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইতিহাস লেজুর বৃত্তির ইতিহাস।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দলীয় পটপরিবর্তন হলে আগৈলঝাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারও পরিবর্তন হয়। যার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি সরকার ক্ষমতার আমলে সেকেন্দার মৃধা কমান্ডার হলেন, আবার জাতীয় পার্টির আর এক সমর্থক আ. আজিজ দাড়িয়া কমান্ডার হলেন। ক্ষমতায় এলো বিএনপি, তখন আওয়ামী সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক কমান্ডার মতিউর রহমান তালুকদারের কমিটি বাতিল করে কুদ্দুস শাহকে আহবায়ক বানিয়ে পুরস্কৃত করা হল। ৫ বছর তিনি আহবায়ক হিসাবে কাটিয়ে দিলেন।

গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে কুদ্দুস শাহকে বিদায় করা হল। তার স্থানে আহবায়ক হিসেবে বসানো হলো আওয়ামী পন্থী আ. রসিদ শিকদারকে। এভাবেই আগৈলঝাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সবসময় ছিল দলীয় করণের মধ্যে। যার ফলে এখনও প্রত্যক্ষভাবে দল না করা অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে না পেরে, তাদের প্রাপ্য সম্মান না পেয়ে হতাশায় শেষ নিঃশ্বাষ কাটানোর অপেক্ষায় রয়েছেন। যা আমাদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের এক সময় জাতির কাছে বিচার দিতে লজ্জা করবে। তাই জাতিকে লজ্জার হাত থেকে বাচাতে এখনও সকল গ্রাম খুজে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রনয়ন করা, সরকারীভাবে এখনও চিহ্নিত না হওয়া বধ্য ভুমিগুলোর চিহ্নিত করন ও রাস্ট্রিয় উদ্যোগে শহীদদের জন্য স্মৃতি সৌধ নির্মান করতে প্রধানমন্ত্রীর সরসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন মুক্তিযোদ্ধা কেএম শামসুর রহমান।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৪)