বাগেরহাট প্রতিনিধি : বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের শেলা নদীর আশ-পাশে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা মিলছে না রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ বন্যপ্রাণীর। গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে সুন্দরবনে শেলা নদীতে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের অয়েল ট্যাংকার দূর্ঘটনার পর সুন্দরবনে নদ-নদী ও খাল থেকে তেল অপাসরন চলাকালে বন্যপ্রানীর দেখা মিলছে না। তবে ডলফিনের দেখা মিললেও অন্য জলজ ও জীব জন্তুর দেখা না মেলায় হতাশায় জেলে-বনজীবীরা। জেলে -বনজীবীরা জানিয়েছেন, ফার্নেস অয়েল কারনে ঘটনাস্থলের আশ-পাশের বন্যপ্রানী অন্যত্র চলে গেছে । তবে বনবিভাগ বলছে, ফার্নেস অয়েল অপসারনে অনেক লোকের আনাগোনা ও সুপেয় পানির অভাবে বন্যপ্রানী বনের গহীনে চলে যেতে পারে।

সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের যেসব এলাকায় পানিতে তেল ভেসে গিয়ে আটকে গেছে। সেসব এলাকায় বনের নদ-নদীর চর ও খালের বিভিন্ন স্থানে তেলের আস্তরন লেগে থাকায় বন্যপ্রানী ও জলজ প্রানী হুমকির মুখে রয়েছে। বনের হরিন নদীর চর ও খালের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা খাবার সগ্রহ করে। কিন্তু এসব এলাকায় তেলের আস্তরন থাকায় তাদের খাবার সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া বনের প্রানীকুল এসব এলাকা থেকে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা নেই। এসব কারনে বন্যপ্রানী হুমকিতে রয়েছে বলে ওই বিশেষজ্ঞ দাবী করেন। তিনি বলেন, দ্রুত তেল অপাসারন করতে সরকারের গুরুত্ব ভুমিকা থাকা প্রয়োজন। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মত গাছের গোড়ায় লেগে থাকা তেল অপসারনে বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত হয়েছে। পঞ্চম দিনের মত সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলে ও বনজীবীসহ স্থানীয়রা সনাতন পদ্ধতিতে তেল সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৮শ সহ পদ্মা অয়েল কোম্পানী মোট ৫৬ হাজার ২শ-লিটার তেল কিনেছেন বলে ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান।


মঙ্গলবার সকাল থেকে সুন্দরবন বিভাগ বন সংলগ্ন বলেশ্বর নদী থেকে ট্রলার বোঝাই করে শেলা নদীসহ ১৮ টি খালে তেল অপসারনে নতুন পদ্ধতি হিসাবে কচুরিপানা ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন, মঙ্গলবারও বিপুল সংখ্যক লোক সুন্দরবনের নদী-খালের তেল সংগ্রহের কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বনবিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কচুরিপানা ছড়িয়ে ও পাম্প মেশিন দিয়ে পানি স্প্রে করে তেল অপসারণ এবং সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রেখেছে বরে তিনি জানান।

সুন্দরবন দিয়ে নৌযান চলাচলকে কেন্দ্র করে কয়েকটি দপ্তরের সমন্বয় হীনতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দ্রুত এর সমাধান চান বিশেষজ্ঞ ও বন সংলগ্ন এলাকাবাসি। সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও বাপার সংবাদ সম্মেলন সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তাহলে বনের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং বনের ভিতরে যে তেল ছড়িয়ে পড়ছে এটা অনেক কমানো যেত। এই তেলেযুক্ত পানি, লতাপাতা ও ঘাস খেয়ে বন্যপ্রাণী আক্রান্ত হবে। এছাড়া সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ এবং মংলা-ঘাসিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত চালুর করতে হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেছেন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। সুন্দরবনের শেলা নদী পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিকেলে মংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সুন্দরবন সুরক্ষায় পৃথক মন্ত্রনালয় গঠনেরও দাবী জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান সিএইচআরএম’র চেয়ারম্যান ড. মো: জিয়াউর রহমান ও ব্যারিষ্টার জাকির হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।

এর আগে দুপুরে বাপার একটি প্রতিনিধি দল শেলা নদীর পাড়ে জয়মনিরঘোল এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে। সম্মেলনে বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, তেলের ট্যাংকার ডুবির ফলে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ বারবার প্রমানিত করছে যে সরকার সুন্দরবনের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। অথবা বুঝে তা সংক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি নন। এ সংবাদ সম্মেলনে বাপার স্থানীয় নেতা নুর আলম শেখসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন।

টোটালের মাস্টারসহ চারজন কারাগারে

সুন্দরবনে “ওটি সাউদান স্টার সেভেন” কে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া ঘাতক ট্যাংকার এমটি টোটালসহ চার জনকে নারায়নগঞ্জ থেকে আটকের পর মঙ্গলবার ভোরে তাদের মংলায় আনা হয়। নারায়নগঞ্জ বন্দর পুলিশের সহয়াতায় মংলা থানার এসআই মঞ্জু তাদের আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে এমটি টোটাল ট্যাংকারের মাস্টার মোস্তফা (৫৩), সুকানি ফারুক (৩৪), আক্কাস (২৫) ও পিয়ার আলী (৩০) রয়েছে। মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: বেলায়েত হোসেন জানান, এদিন বিকালে আটককৃত ৪ জনকে বাগেরহাট আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। আদালত তাদের বাগেরহাট কারাগারে পাঠিয়েছে।

(একে/পি/ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪)