কলাপাড়া প্রতিনিধি : ভিজিট ও অপারেশন বানিজ্য সুবিধা নিতে এবার খোদ ডাক্তার তাড়ানোর মিশনে নেমেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা.আব্দুর রহিম ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার গোলাম ফরহাদ। কলাপাড়া হাসপাতালে চালু হওয়া বিদেশী অর্থায়নে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা (এমএনএইচআই ) প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত দুই ডাক্তারকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছে। এ কারণে এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা সুবিধা নেয়া হাজার হাজার গর্ভবতী মা ও শিশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা।

অথচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিদিন শত শত রোগীকে ডাক্তারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য প্রশাসক দাবি করছেন প্রকল্প বন্ধ হবে না শুধু ডাক্তার বদল হবে। কারণ কলাপাড়া হাসপাতালে বেশি ডাক্তার দরকার নেই। তারাই সবার চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন।

গত মাসে স্বাস্থ্য কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান এ প্রকল্প বন্ধ ও ডাক্তারদের বদলীর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কমিটির সদস্যদের জানানোর নির্দেশ দিলেও তার আদেশ উপেক্ষা করেছেন খোদ স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. আব্দুর রহিম।

জানা যায়, এমএনএইচআই প্রকল্পের দুই ডাক্তার ডা. আমিনুল ইসলাম ও ডা. তাসলিমা ফেরদৌসি রিমা কলাপাড়া হাসপাতালে যোগদানের পর তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসায় উপকূলীয় হাজার হাজার নারী ও শিশু যুগের পর যুগ ধরে থাকা হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার অনিয়মের দূর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু তাদের সরাতেই উঠে পড়ে লেগেছে একটি চক্র। এদিকে কলাপাড়া হাসপাতালের দুই ডাক্তারকে অপসারনের চেষ্টার খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কুট কৌশলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে সাধারণ মানুষ। তারা দুই ডাক্তারকে কলাপাড়া হাসপাতালে বহাল রাখতে এবং এমএনএইচআই প্রকল্প বন্ধ না করার দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জেলা সিভিল সার্জন বরাবর গতকাল আবেদন করেছেন।

আবেদনে উল্লেখ করেছেন, কলাপাড়া হাসপাতালে এই দুই চিকিৎসক থাকায় সাধারন মানুষ ও গর্ভবতী মা ও শিশুরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা পেতো। কিন্তু তারা বদলী হলে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

মানুষের অভিযোগ ডা. আব্দুর রহিম ও বরিশাল মেডিকেল কলেজের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি চিকিৎসক গোলাম ফরহাদ সব সময় ব্যস্ত থাকে অপারেশন বাণিজ্যে। স্বাস্থ্য প্রশাসক হলেও ডা. আব্দুর রহিমের চেম্বারে চলে ওপেন সিক্রেট ভিজিট বাণিজ্য। তার সাথে স্থানীয় ক্লিনিক মালিকদের রয়েছে গোপন সখ্যতা। ওই দুই ডাক্তারের কাছে সাধারন মানুষ চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের অপসারনের ব্যবস্থা করেছেন। কারণ তারা কলাপাড়া হাসপাতাল থেকে চলে গেলে তাদের ভিজিট ও অপারেশন বাণিজ্য আরও বাড়বে। এদিকে হাসপাতালের এমএনএইচআই প্রকল্পের বিভিন্ন মালামাল ও যন্ত্রাংশের কোন হদিস নেই হাসপাতালে। মূলত গোটা প্রকল্পটি ডা. আব্দুর রহিম নিয়ন্ত্রণ করায় এই প্রকল্পে গত দুই বছরে কি কি বরাদ্ধ হয়েছে তা কেউ জানতে পারছে না। এমনকি এই প্রকল্পের মালামাল কোথায় ব্যবহার হচ্ছে তা জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল এই প্রকল্প কলাপাড়া হাসপাতালে শুরু হয়।

এ ব্যাপারে আবাসিক মেডিকেল অফিসার গোলাম ফরহাদ’র সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা.আব্দুর রহিম জানান, কলাপাড়া হাসপাতালে এখন অনেক ডাক্তার তাই প্রকল্পের ডাক্তার দরকার নেই। তবে এমএনএইচআই প্রকল্প কলাপাড়ায় চলবে অন্য ডাক্তারদের দিয়ে। ওই দুই ডাক্তারকে হাসপাতাল থেকে সরানোর অন্য কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আর কোন কারণ নেই। আর ভিজিট ও অপারেশন বাণিজ্যের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

(এমকেআর/পি/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪)