বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাট পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে। বাগেরহাট ডাকবাংলোতে অবস্থিত রাজাকারদের ক্যাম্প দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়। এইদিন সকালে জেলার চিতলমারীর সন্তোষপুরে অবস্থিত বাগেরহাট সাবসেক্টরের হেডকোয়াটার থেকে সাবসেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের ফল-ইন করিয়ে মোট দুটি গ্রুপে ভাগ করে বাগেরহাট শহরের দিকে রওনা হন। তাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বড় দলটি মুনিগঞ্জ খেয়া পার হয়ে বাগেরহাটে পর্দারপন করেন। অন্যদিকে ছোট দলটিকে সুলতানপুরের পথে বাগেরহাট মাঝিঘাট দিয়ে নদী পার করানো হয়। দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দেন কমান্ডার সৈয়দ আলী।

১৯৭১ সালের এদিনে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাগেরহাটের দামাল ছেলেরা নিজ জেলাকে মুক্ত করেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে ধ্বংসযজ্ঞ শেষে ১৭ ডিসেম্বর যখন পাক হানাদার বাহিনী বাগেরহাট ছেড়ে যাচ্ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধারা বাগেরহাট মাতৃভূমিতে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী চলে গেলেও রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী বাগেরহাটে তাদের অবস্থান ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাঙ্কুশ রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে বাগেরহাট মহাকুমার অধীনস্থ থানা সদর গুলোর রাজাকার ক্যাম্পসমূহ আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রন্ত হওয়ায় রাজাকারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৫ ডিসেম্বর রাতের মধ্যেই বাগেরহাট মহাকুমার সব রাজাকার ক্যাম্প গুলো থেকে রাজাকাররা বাগেরহাটে এসে জড়ো হয়। পরেরদিন ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পর পরই রাজাকার কমান্ডার রজ্জব আলী ফকির বাগেরহাট ডাকবাংলোর সামনে রাজাকারদের একটি সভা আহবান করে এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

তাজুল ইসলাম তার বাহিনী নিয়ে বাগেরহাটে পৌছানোর পর রাজাকার বানিহীর সাধারণ সদস্যরা তার নিকট আত্মসমর্পণ করে। ওই রাজাকারদের প্রথমে বাগেরহাট স্কুলের দুটি কক্ষে এবং পরে জেল খানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

(একে/পি/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪)