স্টাফ রিপোর্টার, যশোর : যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিশোর ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। আর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা কিশোররা কয়েকটি কক্ষ ভাংচুর করে। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে আসা এক অভিভাবককে মারপিটের প্রতিবাদ নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।


কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কিশোররা অভিযোগ করে, রবিবার সকালে মতিয়ার নামে এক দর্শনার্থী অভিভাবক তার ভাই কিশোর আশিকের সঙ্গে দেখা করতে আসে। কিন্তু গার্ডরা তাদের দেখা করতে না দিয়ে মারপিট করে। বিষয়টি জানতে পেরে কিশোরদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা গার্ডদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং কয়েকটি কক্ষের কাঁচ ভাংচুর করে। এ সময় উন্নয়ন কেন্দ্রের গার্ডরা কিশোরদের মারপিট শুরু করলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তখন পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে কিশোররা ২০টি রুমের জানালা, প্রিজন ভ্যান, পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। সংঘর্ষে নাজমুল, সজীব, শাওন, আরমান, রায়হান, আশিক, রাশেদ, বাপ্পিসহ ১৩ জন কিশোর এবং পুলিশ কনস্টেবল তুহিন (৩০) ও আলমগীর (২৮) আহত হন।

আহতদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল তুহিন, আলমগীর এবং কিশোর নাজমুলকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, সংঘর্ষের খবর পেয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা বিক্ষুব্ধ কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কিশোররা তাদের কাছে অভিযোগ করে, বিভিন্ন সময় তাদের ওপর কারণে অকারণে নির্যাতন চালানো হয়, নিম্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয়, কেন্দ্রে তাদের প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা, ওষুধের কোনো ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু অভিভাবকদের সাথে দেখা করতে, আদালতের কাগজপত্রে সাক্ষর করতে ঘুষ দিতে হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে আসছিল।

তবে কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, মাস কয়েক আগে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে বিদ্রোহ করা বাপ্পিসহ মোট ১২ জন কিশোর যশোরে স্থানান্তর করার পর এই কেন্দ্রে অশান্তি বাড়তে থাকে। রবিবার সেই কিশোর বাপ্পির নেতৃত্বে পুলিশের উপর হামলা ও কেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক শাহবুদ্দিন জানান, সকালে একজন অভিভাবক দেখা করতে আসলে তার আচরণে গার্ডদের সন্দেহ হয়। এ কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ নিয়ে কিশোরদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তারা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারপিট করে। পরে পুলিশের সাহায্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭দিনে মধ্যে তাদের প্রতিবেদক পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বলেন, কেন্দ্রের সব পুলিশকে প্রত্যাহার করে পুলিশের অন্য টিমের পুলিশদের কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

(এসআর/অ/মে ০৪, ২০১৪)