আব্দুস সালাম বাবু (বগুড়া): বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনার চরাঞ্চলে পাটের পর মরিচ ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিক্রয় ও সেবা কেন্দ্র।

চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা আওচারপাড়া ও তার আশেপাশের চর ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে ভুট্টা ও মরিচের ক্ষেত, যেন সবুজের সমারোহ। ভাল ফলনের আশায় কৃষকরা ভুট্টা ও মরিচ ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আওচার পাড়া চরের কৃষক সালাম মিয়া জানান, গতবারের চেয়ে এবার তাদের এলাকায় দ্বিগুন জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। আগে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৫ মন ভুট্টা পেয়েছেন। এবার বিঘা প্রতি তারা ৪০ থেকে ৪৫ মন ভুট্টা পাবেন বলে আশা করছেন। হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিগাপাড়া,করমজাপাড়া চর ঘুরে দেখা গেছে ফুল ও ফলে ভরা মরিচ গাছ। কোন কোন জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে, আবার কোন জমি (ফ্লাওয়ারিং স্টেজ) ফুল ধরার সময় পরিচর্যা করা হচ্ছে। মরিচের ভাল ফলন পেতে ব্যস্ত কৃষক পরিবারগুলো। নয়াপাড়ার কৃষক সাহিন আলম জানান, গত বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। ৫ বিঘায় সর্ব মোট খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা। ৩০ মন কাঁচা মরিচ ৪০ হাজার টাকা এবং প্রতি মন শুকনা মরিচ ৫হাজার ৭শ টাকা হিসেবে ৩০ মন শুকনা মরিচ বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এবার বন্যার কারনে ৩বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন, এপর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। দেরীতে চাষ করলেও এবার একই পরিমান ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। আন্তরিকভাবে মরিচ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন দিগাপাড়ার প্রতিমা রাণী। তিনি জানান, তার স্বামী মিনাল চন্দ্র সাহা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, বেশীর ভাগ সময় তাই নিজেই মরিচ ক্ষেত দেখাশুনা করেন।জমি তৈরী, বীজ শোধন, নিরানি, রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ, মরিচ ফল পরিপক্ক যাচাই করা, মরিচ তোলার পদ্ধতি, মরিচ শুকানো,বীজ সংরক্ষণ সবই তার জানা আছে।পাশেই দাঁড়ানো জলি খাতুন নামে এক গৃহিণী বলে ওঠেন, পাট চাষ কিভাবে করলে ভাল ফলন ও দাম পাওয়া যায় তাও আমাদের জানা আছে, আগে আমরা পাট কেটে এক জায়গায় রাখতাম। এখন আর সেভাবে না কেটে মোটা ও চিকন পাট আলাদা করে কেটে আলাদা আলাদা ভাবে পাট জাগ দেয়া হয়। পাট জাগ দেয়ার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি। আগে আমরা সরাসরি পাট জাগের ওপর মাটি দিয়েছি ভরা দেয়ার জন্য। এখন আমরা বস্তায় মাটি ভরাট করে ও খড় দিয়ে পাটের জাগে । এত করে এবছর তাদের পাটের আঁশের রং সোনালী হয়েছে। ফলে চাহিদা ভাল হওয়ায় দামও ভাল পেয়েছে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া. দিগাপাড়া, করমজাপাড়া চর ঘুরে দেখা গেছে ফুল ও ফলে ভরা মরিচ গাছ। কোন কোন জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে,আবার কোন জমি (ফ্লাওয়ারিং স্টেজ) ফুল ধরার সময় পরিচর্যা করা হচ্ছে। মরিচের ভাল ফলন পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক পরিবার গুলো। নয়াপাড়ার কৃষক সাহিন আলম জানান, গত বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। ৫ বিঘায় সর্ব মোট খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা।
কৃষকরা একত্রিত হয়ে তাদের চরে গড়ে তুলেছেন বিক্রয় ও সেবা কেন্দ্র। তাদের এ সংগঠনে ৭টি কৃষক উৎপাদক দলে ১৬৪ জন কৃষক রয়েছেন। কৃষকদের মান সম্মত ফসল উৎপাদনে ২জন রিটেইলার, ২জন হাল বিক্রেতা,১২ জন সেচ বিক্রেতা, ৪টি ভাল কম্পানী এবং মরিচ ও ভুট্টার ৬জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। পাট, ভুট্টা ও মরিচের মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে উপজেলা কৃষি অফিস ও এনজিও তাদের চরের কৃষকদের সহযোগীতা করা হচ্ছে। জানা গেছে ওই এলাকায় এমফোরসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সুইচ কন্ট্রাক্ট প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বগুড়া এবং যমুনার চরাঞ্চলে সহযোগী সংস্থা এসকেএস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ বজলুর রশিদ রাজা জানান, প্রতি বছরই সারিয়াকান্দির যমুনার চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের ভালো ফলন হয়। এ এলাকার কৃষকরা বহুমুখি ফসলের চাষ করে থাকে। এখানকার কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ সর্বদা কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এবারও মরিচ ও ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

(এএসবি/এসসি/ডিসেম্বর১৮,২০১৪)