আজ আমার মনটা ভালো নেই
একটুও ভালো নেই
কেন আমার জানালায় আকাশটা উঁকি
দিলোনা সেই সক্কালবেলা?
কেন সূর্য কুয়াশার চাদর মুড়ে
আমাকে বললো না সুপ্রভাত?

আজ মন ভালো নেই লাবণ্যলতা,
একটুও ভালো নেই।
আজ তোমার হাতের সেই লেবু গন্ধী
এক কাপ কড়া তেতো চা
চেয়েও পেলাম না।
আজ তুমি কোথায় লাবণ্যলতা?

মহাবলীপুরমের সেই দিনটা
সেই যেদিন বুকটা শুকিয়ে কাঠ
হঠাৎ তোমার হাতে এ কী
টাটকা সবুজ কলাপাতায়
মখমলী তালশাঁস তোমার ভালবাসার
মত কোমল নিখাদ ! আমি ইতিহাসের
ভাঙ্গা সিঁড়িতে পাথর থামে হেলান
দিয়ে সমুদ্র দেখছি আর তালপাতার
বইটার
পাতা উল্টে পড়ছি ধূসর দিনগুলো
আর হঠাৎ শুনি ঘণ্টার ধ্বনি
তালে বেতালে পাথর হাতি দলে দলে
আসছে ধেয়ে স্পষ্ট বৃংহণ শব্দে! আমি
দু 'হাতে তোমাকে জড়িয়ে
চিৎকার করে উঠলাম ভয়ঙ্কর!
বিলাপের মত শুনালো।
দেখলাম সারি সারি মত্ত সৈনিক
উদ্ধত তরবারির উচ্চকিত ঝঙ্কার
না না না আমার আর্ত আর্তনাদ
আমি লুটিয়ে পড়েছি বালুকা বেলায়।
হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাস
মায়ের দু ' হাতের মত জড়ালো।
তুমি নেই মা নেই কিছু নেই আমি
এখানে রুদ্ধ ঘরে, আমার ভালো
লাগেনা!

আজ আমার মন ভালো না
লাবণ্যলতা!
আজ সকালে বাস থেকে নেমেছি
ভয়ানক ঠাণ্ডায় থরথর কাঁপছি
আমি কাঁপছি কাঁপছে কাজল
কাঁপছো তুমি বাস ভর্তি ট্যুরিস্ট
আর ধাবার কম্বল মোড়া বুড়োও।
বিশাল.ছাতা তেঁতুল গাছ কাঁপছে
হিমেল বাতাস কাঁপছে ঝরছে পাতা
সেই গরম ধুমেল চায়ের গেলাস
ছোট্ট চুমুক আহা! খাটিয়াটা মড়াৎ
মড়াৎ ছিটকে গেল চায়ের গেলাস
মীরাটের সেই. সকাল আমাকে ধূলিতে
লুটিয়ে দিয়েছে লাবণ্যলতা
বলো মন ভালো লাগে? মন ভালো
নেই., মন ভালো নেই।

আজাদির জন্মদিন


যেদিন সে জন্ম নিল মাতৃগর্ভ থেকে
জন্ম মাত্রই রক্তাক্ত শরীরে উতরোল
কান্নায় দশমিক কাঁপিয়ে
বলেছিল আমার নাম আজাদি
আমি সকলের স্বপ্নে সৃষ্ট আজাদি!
তার জন্মমাত্র কোমল সেই ভূমিতে
রক্ত আর বারুদমাখা ভূমিতে
শুরু হয়েছিল এক মহাপ্লাবন
ঘরদোর ছেড়ে মত্ত উল্লাসে
মানুষের স্রোতের প্লাবন,
আকাশ বাতাস উন্মাদ করা
মানুষের দিক দিগন্ত বিস্তৃত উত্থান।
প্রাণের উদ্বেলিত আবর্তে সবুজের
আন্দোলিত উচ্ছ্বাস আর লাল এক সূর্য টকটকে লাল
উঁকি দিল সব ঘরে আহ্লাদে ডগমগ।
আগুন ঝলসানো মানুষ শক্ত মুঠিতে
ধরল সবুজের মাঝে লাল সূর্য
পতাকার দণ্ড আজাদি উঠল হেসে।

তারপর কত মেদুর বর্ষা কত
শিশিরে স্নাত শরৎ অঘ্রাণের
পাকা ধানক্ষেতে ধানী রঙ রোদ্দুর
গা এলিয়ে আমেজে করল আশনাই!
আহা আজাদি হেঁটে চলল!
আর নেই বোমা বারুদ
আর নেই মায়ের কান্না বোনের বেলাজ ধর্ষণ,
তরতর স্রোতে মেশে ভাটিয়ালী সুর নাইয়া চলে
সাত গাঁ উজানে বোনের ঘর।
ঘর পোড়া মানুষ ভাবল সুদিন এলো বুঝি!
আহ্লাদে আজাদ হল আজাদি।

আর ওপারে অবাক পড়শীরা উঁকি দিয়ে
আড়চোখে চেয়ে বিস্ময়ে ভাবে
এমন রূপসী দেশও আছে!
আশ্চর্য প্রাণের রক্ত স্রোতে আজাদির জন্ম যে বিস্ময়!
উলু দাও শাঁখ বাজাও উদাত্ত আজানের সুরে
আকাশ বাতাস মাতাও, মন্দিরে বাজাও কাঁসর ঘণ্টা!
বিলে বিলে সব জলাশয়ে শাপলারা
হাজারে হাজারে হাসির তুফান তুলো!
আজ আজাদির জন্মদিন!

উন্মত্ত সময়ের অনেক ঢেউয়ে ভেসে
বহুদিন কোথায় যে হারালো
কত পাখি ডানা ভেঙ্গে মাটিতে লুটালো,
তারুণ্য পেরিয়ে যৌবনের দামাল দিন হারানো আজাদি
ঝিম ধরা বার্ধক্যের দিন গুণে।
আর যত সব জনপদ সারি সারি
নিস্প্রদীপ ম্রিয়মান প্রাণগুলি নিয়ে ডুব দেয় হাহাকারে,
কি এক ভয়ে বুক কাঁপে,
আশা নেই ভাষা নেই প্রাণ নেই
এই কি আজাদি?
হায় জল্লাদ বাহিনী মেদিনী কাঁপায় আজো
সর্বনাশা এ কোন আগুন জ্বলে পোড়ায় বসতি?
কী নিদারুণ শূন্যতা হাহাকার করে স্তব্ধ চরাচরে!
পড়শীরা ভাবে নিঃস্তব্ধ চরে কার ঘরে
প্রেত নৃত্যচলে নিস্প্রদীপ রাতে?
ও গো হল কি তোমাদের?
আজ যে আজাদির জন্মদিন!
আনন্দে নাচবে কখন?
প্রত্যুত্তর দেয়না কেউ নিথর নিঝুম।

উৎসর্গ ---বাংলার সব বন্ধুকে।