চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা, তখনও চাটমোহরে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা অবস্থান করছিল। চুড়ান্ত বিজয়ের ৪ দিন পর ২০ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে চাটমোহর হানাদার মুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের মে মাসে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকবাহিনী পাবনা থেকে চাটমোহরে আসে। হিন্দু অধ্যুষিত ছোট শহর চাটমোহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ। আগুন ধরিয়ে দেয় বিভিন্ন স্থানে। তদানিন্তন ন্যাশনাল ব্যাংক চাটমোহর শাখা লুট করে। ব্যাংক ম্যানেজার আবুল কালাম খাঁনসহ দু’জন গার্ডকে হত্যা করে। নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যতীন কুন্ডু, রঘুনাথ কুন্ডু, ঝড়– ঠাকুর ও আশ্বিনী কুন্ডুকে। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা রাজত্ব চালায়। চাটমোহরের আশপাশে মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক পাকবাহিনী তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরকে পরাজিত করতে থাকে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা চাটমোহরে প্রবেশ করে। ঘিরে ফেলে চাটমোহর থানা।

পাকবাহিনী শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে থানাকে বেছে নেয়। যুদ্ধ শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। এক পর্যায়ে থানার মধ্য থেকে রাজাকাররা জয় বাংলা শ্লোগান দিতে থাকে। এই শ্লোগান শুনে রামনগর গ্রামের দুই সহোদর মোসলেম ও আবু তালেব ভেবেছিলেন থানা দখল হয়ে গেছে। তারা থানায় ঢুকতেই হানাদারদের ব্রাশফায়ারে তারা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয় দুর্ধর্ষ পাক হানাদার শের আফগান। অবশেষে হানাদাররা সাদা পতাকা উড়িয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। দীর্ঘ আলোচনার পর হানাদাররা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি জেলা কমান্ডারকে জানান। পাবনা জেলা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বকুল (প্রয়াত) মিত্র বাহিনীর পোষাকে চাটমোহরে আসেন। ২০ ডিসেম্বর এই নকল মিত্র বাহিনীর কাছেই পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করে। শত্রু মুক্ত হয় চাটমোহর। সেই থেকে ২০ ডিসেম্বর ‘চাটমোহর মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও চাটমোহরবাসী পালন করে আসছে।

(এসএইচএম/এএস/ডিসেম্বর ২০, ২০১৪)