নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো এলাকার অসহায়, দরিদ্র ও দিনমজুর পরিবারের রোগাক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্য সেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে। জেলার সদর, মহাদেবপুর, বদলগাছী, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পোরশা, আত্রাই, রানীনগর ও মান্দা উপজেলার ৯৯ টি ইউনিয়নের ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ২১ হাজার ৭শ’ ৫৪ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। এসব রোগীর বেশিরভাগই দরিদ্র ও দিনমজুর পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু। বর্তমান সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ এ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ায় তারা অত্যন্ত খুশি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের ওজন ও উচ্চতা মাপা, ডায়াবেটিক পরীক্ষা, নিরাপদ গর্ভধারণের জন্য নানা বিষয়ক পরামর্শ, মহিলাদের আয়রন ও ভিটামিন এবং শিশুদের ভিটামিন, কৃমিনাশক ও পোলিও টিকার ক্যাম্পেইনসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

অতিসম্প্রতি জেলার মহাদেবপুর ও পত্নীতলাসহ বিভিন্ন উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীদের কমিউনিটি ক্লিনিকে উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। পত্নীতলা উপজেলার সম্ভুপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ডা. অপূর্ব কুমার দাস জানান, প্রতি দিন এখানে গড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা সম্ভুপুর গ্রামের মোছা. আক্তার বানু, মোছা. নুরবানু বেগম, মোছা. মরিয়ম বেগম ও শারমিন আক্তার জানান, গ্রামাঞ্চলের দুঃখী মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা নেয়ার অন্যতম স্থান এসব কমিউনিটি ক্লিনিক।

একই সময় চিকিৎসা নিতে আসা হারপুর গ্রামের আলম হোসেন, বোরাম গ্রামের বিপ্লব ও কাঁটাবাড়ী গ্রামের সায়েম জানান, এসব কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হওয়ায় এলাকার জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত মানুষ ছাড়া সাধারণ যে কোনো রোগে অসুস্থ্য লোকজন বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার ফলে তারা বেজায় খুশি।

মহাদেবপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। সেখানকার সিএইচসিপি ডা. বিকাশ চন্দ্র বর্মন জানান, তার এই ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ থেকে ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা লক্ষ্মীপুর গ্রামের শিরিনা আক্তার, সঞ্চিতা, হাফিজা, শাহানাজ, রেহেনা, এলিনা এবং জোতকাউন গ্রামের মারুফা জানায়, তারা এ ক্লিনিকগুলো থেকে নিয়মিত চিকিৎসা পাওয়ার ফলে তাদের উপজেলা সদর বা অন্য কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে না। ফলে বাড়ির কাছে তারা সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় আনন্দিত। পাশাপাশি তারা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনাসহ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে প্রথম বাবের মত দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেন। অবশ্য ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ পুনরায় সরকার গঠনের পর ওইসব কমিউনিটি ক্লিনিক ফের চালু করেন। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষরা তাদের হাতের নাগালে আবারও ফিরে পায় নিশ্চিত স্বাস্থ্যসেবা।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোজাহার হোসেন বুলবুল জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার জনগনের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে এ জেলায় ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। এসব কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করতে সরকার ৯ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭শ’ ৫২ টাকা খরচ করেন। এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে প্রতিদিন উল্লেখিত পরিমান রোগী নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, বর্তমানে এ জেলায় কর্মরত এমবিবিএস ডাক্তারদের মধ্যে ৩০ জন এমবিবিএস ডাক্তার পর্যায়ক্রমে ওইসব কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন।

(বিএম/এএস/ডিসেম্বর ২০, ২০১৪)