নওগাঁ প্রতিনিধি : চলতি রবি মৌসুমে উত্তরের নওগাঁ জেলায় মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের সমারোহ। মাঠের দিকে তাকালেই সরিষা ফুলের হলুদ ফুল শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেন সকলের দৃষ্টি কাড়ে। মনও যেন মুগ্ধ হয়ে যায়। দিগন্ত জুড়ে হলুদের এই সমাহার শুধু মৌমাছিদেরই আকৃষ্ট করে না। ক্ষেতের সরিষা ফুলগুলো বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের অনাবিল আনন্দেরও খোরাক জোগায়। গেল বছরের বাম্পার ফলন এবং বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় এবার নওগাঁ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষার আবাদে বেশ ঝুঁকে পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার জেলায় ৩৪ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে। তবে মৌসুমের শুরুতে অধিক কুয়াশাপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় এবার জেলার কৃষকরা ৩৪ হাজার ৭শ’হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছে। সূত্র মতে, ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত জমিতে সরিষা বীজ বপনের সময় থাকলেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জেলার কৃষক তাদের জমিতে সরিষা বপন করে। এর পরেও সরিষা আবাদ এবার নওগাঁ জেলায় বেশ ভাল উৎপাদনের আশা করছে কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তারা গুরুত্বের সঙ্গে সরিষা চাষে উদ্যোগ নিয়েছে। আগে যেসব এলাকায় সরিষার আবাদ হতোনা, সেসব এলাকায় উচ্চ ফলনের আশায় কৃষক নতুন ও উন্নত বীজ সংগ্রহ করে তা বপন করেছে। নওগাঁ সদরের মধ্য দূর্গাপুর ও মান্দা উপজেলার কুসুম্বা, মৈনম ও নূরুল্লাহবাদ ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের সমারোহ। আগাম বপনকরা সরিষা গাছে ফুল ফুটেছে। সেই ফুলের মনমুগ্ধকর দৃশ্য যেন সকলকেই মুহুর্তেই আকৃষ্ট করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেন এ এক লীলাভূমি। মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের কৃষক অমল কুমার জানান, গেলবার তিনি একবিঘা জমিতে সরিষা চাষ করলেও এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা বপন করেছেন। তিনি নতুন জাতের ‘টরি-৭’ নামে সরিষা এবার প্রথম বারের মত চাষ করেছেন। ৭৫ দিনের মধ্যে এই সরিষা ক্ষেত থেকে তুলে ওই জমিতে বোরো ধান রোপন করতে পারবেন বলে তিনি জানান। এছাড়াও ফতেপুর গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব ইব্রাহিম হোসেন ২০ বিঘা, আব্দুস সামাদ ১২ বিঘা, মহানগর গ্রামের আব্দুস সাত্তার ৬ বিঘা, পরানপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ১০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন বলে জানান।

ওইসব কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় বারি-৯, ১৪ ও ১৫ জাতের হাইব্রিড সরিষা চাষে বেশী করে ঝুঁকেছেন। নূরুল্লাহবাদ গ্রামের কৃষক আসলাম উদ্দিন এবার ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এছাড়া মোজাম্মের হক ৮বিঘা ও আব্দুর রাজ্জাক ৩ বিঘা জমিতে সরিষা বুনেছেন। ওইসব জমিতে সরিষা চাষ করতে গিয়ে প্রতি বিঘায় তাদের খরচ হয় ২৫ থেকে ২৭ শ’ টাকা। এই সরিষা তুলে ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, কৃষকরা জমিতে আগাম লাগানো সরিষার তুলে নিয়ে সেখানে বোরো চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

(বিএম/এএস/ডিসেম্বর ২১, ২০১৪)