বাগেরহাট প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাগেরহাটের মংলা- ঘষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন খালের বাঁধ অপসারণ ও ২৩ খাল পুণ:খননের কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রামপাল উপজেলা সদরের ওড়াবুনিয়া খালের বাধঁ কেটে এই কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক।

এসময় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: আবদুস সামাদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু: শুকুর আলী, পুলিশ সুপার মো: নিজামুল হক মোল্যা, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মো: আরিফ, রামপাল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গত ৯ ডিসেম্বর শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনার পর থেকে ওই নৌরুট বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মংলা বন্দরে। তাই মংলা বন্দরকে সচল রাখার দাবীতে শেলা নদী চালুসহ মংলা-ঘাসিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত পুন:খননের দাবী জানান এলাকাবাসি। এরপর প্রধানমন্ত্রী মংলা- ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ সংলগ্ন খালের বাঁধ অপসারণ ও খাল পুণ:খননের নির্দেশ দেন।খুুলনা বিভাগীয় কমিশনার এ কাজের সার্বিক সমন্বয় এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন তত্ত্বাবধায়ন করছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন,‘খালে বাধঁ দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ অবৈধ ভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছিল। আমি সব সময় এর বিরোধী ছিলাম। ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর খালের অবৈধ বাধঁ অপসারনের উদ্যোগ নিলেও তখন প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: আবদুস সামাদ বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে মংলায় ১০ টি ও রামপালের ১৩ টি খালের বাধঁ অপসারনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এসব খালের বাধঁ অপসারনে ৭দিন সময় লাগবে। এছাড়া আগামী ১ মাসের মধ্যে খালের পূন:খনন কাজ শেষ হবে আশা করছি। তবে একাজের ফলোআপ রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ- ভারত প্রটোকলভুক্ত আন্তর্জাতিক নৌরুটের বাগেরহাটের মংলা - ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত খননের দাবীতে চ্যানেলের কুমারখালী এলাকায় নদী তীরে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠনসহ এলাকাবাসি। গত রবিবার বিকেলে ঘন্টাব্যাপী এমানববন্ধনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেয়। এলাকাবাসির সাথে সংহতি প্রকাশ করে রামপাল উপজেলা আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিপিডি, ওয়াকার্সপাটি, বংলাদেশ বিকল্পধারা, কারিতাসসহ অসংখ্য সামাজিক ও সাংকৃতিক সংগঠন।

এলাকাবাসি জানায়, আন্তর্জাতিক নৌরুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি মানুষ্য সৃষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে আজ সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে এই চ্যানেলে দেশ বিদেশের ভারী নৌ-জাহাজ, ষ্টিমার, কর্গো, রকেটসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। ব্যবসা প্রসার ঘটেছিল। মংলা বন্দর সচল ছিল। এই চ্যানেলে মংলা-কুমারখালী নদীর ২২ কি.মি. অকেজো হওয়ায় বর্তমানে পায়ে হেটে এলাকার জনগন নদী পার হচ্ছে। অথচ এটি দেশের অন্যতম একটি নৌ-পথ। মংলা বন্দরে যাতায়াতকারী নৌ-যানের দূরত্ব কমানোর লক্ষে ঘষিয়াখালি ও বেতবুনিয়া খালটি ১৯৬৯-১৯৭০ সাল পযর্ন্ত বিআইডব্লিউটিএ এর অধীনে খনন করা হয়। মংলা-ঘষিয়াখালি নৌরুটটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং স্বার্থন্বেষী মহল চ্যানেলের সাথে সরাসরি ৩২টি খালে অবৈধ ভাবে বাধ দিয়ে চিংড়ী চাষ করার ফলে অতি দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। তারা দ্রুত সরকারি রেকর্ডীয় খালের বাধঁ অপসারণ ও পন:খননসহ মংলা - ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার নদী খননের দাবি জানান।

আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বাচানোর জন্য তার প্রধানতম সংযোগকারী স্রোতের উৎস্য দাউদখালী নদী বর্তমান মানুষ্য সৃষ্ট সর্বনাশা কর্মকান্ডের কারনে পলিমাটি দ্বারা ভরাট হয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাউদখালী নদীর আশেপাশে ও উপরের দিকে বাগেরহাট সদর ফকিরহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ মানুষের হাজার হাজার একর জমির পানি নিষ্কাষনের অভাবে ফসলহানী, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্থায়ী জলাবদ্ধতার সুষ্টি হয়েছে।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪)