কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : স্কুলে যাইয়া আর হি হইবে, ঘরে থাইক্কা রান্দার (রান্না) কাজ করলে মুই গায় খাইট্টা (কাজ করে) কয়ডা টাহা কামাই করতে পারি। আর স্কুলে গ্যালে এ্যাহন অনেক টাকা লাগে হেই টাহা মোরা পামু কই। কেলাস(ক্লাস) ফোর পর্যন্ত তো ওরা পড়ছে। বই পত্র পড়তে পারে। আর কয়দিন পর বিয়া হইবে এ কথা বলেই কেঁদে ফেলে আসমা বেগম। একটি পুত্র সন্তানের আশায় মাত্র ২৫ বছর বয়সে পাঁচটি কন্যা সন্তানের মা। দিনমজুর স্বামী ইসা’র একার উপার্জনে আট সদস্যের পরিবারে তিন বেলা খাবার জোটানো অসম্ভব তাই আসমাকেও এখন কখনও মাঠে, কখনও অন্যের বাসায় কাজ করতে হয়। তাই দারিদ্রতার কারনে পঞ্চম শ্রেনীতে উঠলেই তার মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আর্থিক সংকটে মেধাবী চম্পা ও রিমার লেখাপড়া এখন বন্ধ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের চর ধুলাসার গ্রামে বাড়ি আসমা ও ইসা দম্পত্তির। তাদের সন্তান চম্পা (১৩), রিমা (১২) এখন ঘরের গৃহস্থালী কাজ করেই সময় কাটায়। পঞ্চম শ্রেনীতে উঠলেও তাদের আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। অন্য তিন মেয়ে সীমা (৪র্থ), জুলিয়া (৩য়) ও জান্নাত প্রথম শ্রেনীতে পড়লেও আর্থিক সংকটে তাদের স্কুলে যাওয়া এখন বন্ধের পথে। নতুন বছরে মেয়েদের আর স্কুলে যেতে পারবে কিনা তা জানে না তাদের অবিভাবকরা।


আসমা বেগম জানান,“বড় দুইডাই খুব ভালো ছাত্রী আছিলো। চর ধুলাসার এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাহাপড়া করছে। কিন্তু ঘরে ভাত না থাকলে বই পড়লে তো আর খিদা মেডবে না। তাই ফাইবে ওডার পর আর ইসকুলে পাডাইনি। ছোড তিনডায় তো এ্যাহনও পড়ে। কিন্তু জামা-কাপুড় নাই। ল্যাহার খাতা কিইন্না দেতে পারি না। হেইয়ার লাইগ্যা অরাও আর ইসকুলে যাইতে চায় না। মাছ শুটকি করা, ধানের ছড়া কুড়ানো ও অন্যের বাসায় কাজ করে এতোগুলো মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়। গরীব ঘরে পাঁচ মাইয়া, মোগো কষ্টের কি আর শ্যাষ আছে বলেই কষ্টে তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে।


চম্পা জানায়“ আমার তো স্কুলে যাইতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বাবা-মা যে কষ্ট করে আমি ঘরে না থাকলে ছোট বোনদের দেখবে কে। গত তিন বছর ধরে সেই এখন ওদের দেখাশুনা করছে। রিমা আর্তি “আমি পড়তে চাই। কিন্তু স্কুলে গেলে যে খরচ হেই টাকা কোথায় পাবো”। খাতা-কলম ছাড়া স্কুলে গেলে স্যারের বকা দেয় এই কষ্টে দুই বোনের লেখা পড়া বন্ধ। ছোট বোনদেরও একই অবস্থা। চম্পা জানায়, আমি পড়তে চাই। অনেক বড় চাকুরী করার ইচ্ছা ছিল। সহপাঠীদের যখন স্কুলে যেতে দেখি তখন কষ্টে বুক ফেঁটে যায়। কিন্তু এই কষ্ট কেউ দেখবে না। তাই আমাগো আর লেখাপড়াও হবে না।

চর ধুলাসার গ্রামের ইউপি সদস্য মো. নুরুদ্দিন জানায়, এই পরিবারটি খুবই অসহায়। তবে দুই বোনের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।
ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. জামান হোসেন জানান, টাকার জন্য কারো লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে এটা তিনি জানেন না। আর এখন সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন জানান, স্কুল খুললে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান।

(এমকেআর/পি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪)