| সরকার মাহবুব |

শব্দের অসীম সীমায়

শব্দ হারিয়ে যায় শব্দের অসীম সীমায়।

ধরুন একটি ছোট্ট জাহাজ কিম্বা লঞ্চ
এই মাত্র ঘাট ছেড়ে বেরুলো যাত্রা পথে
গন্তব্য জানা আছে, পথের বাঁকগুলো
তাও জানা নাবিকের।
হুস হুস চলছে এবার, কেবলই সামনে চলা।
গাঙ্গ থেকে গাঙ্গে
এরপর বিশাল সাগরে নামে ক্ষুদ্র-জাহাজ ।
পাল নেই, কেবলই হাল ধরে আছে
একজন সবল নাবিক।
যার হাতে কয়েক’শ মানুষের
প্রত্যাশ এবং জীবনের দায়ভার।
সশব্দে এগিয়ে চলেছে তরী
ক্রমেই সংক্ষিপ্ত হচ্ছে পথ
গন্তব্য এগিয়ে আসছে কাছে।
কেবল ফেলে আসা ঘাট থেকে
ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে, মিলিয়ে যাচ্ছে
একটি শব্দ -একটি পরিচিত সুর।
এভাবেই
শব্দ হারিয়ে যায় শব্দের অসীম সীমায়।


সময় এখন

সময় কাটে হাঁটা চলায়, কথা বলায়, ঘুমের মাঝে
সময় কাটে গপ্পে সপ্পে অলস দুপুর সকাল সাঝে।

সময় যেন রাজহংসীর শরীর মাখা নরম পালক
সময় যেন উদাস মাঠে গরুর পিছে রাখাল বালক।
সময় যেন ধুলো-কাদায় ধীরে চলা গরুর-গাড়ী
সময় যেন আকাশ পানে ঝুলিয়ে থাকা রসের-হাড়ি।
সময় যেন সুদুর পথে একটু থেমে জিরিয়ে নেয়া
সময় যেন ছোট্ট গাঙ্গে পারাপারের ব্যস্ত খেঁয়া।
সময় যেন ধানের ক্ষেতে রাত-বিরাতে মাছের নাচন
সময় যেন ভোর সকালে অধো-মুখে দাঁতের মাজন।
সময় যেন গহীন বনে দলেবলে পাখি-শিকার
সময় যেন গভীর রাতে চুপিসারে পত্র লিখার।
সময় যেন গভীর রাতে চুপিসারে পত্র লিখার।
(সময় যেন গভীর রাতে স্বদেশ নিয়ে গল্প লিখার)
সময় যেন ধানের মাড়াই, লক্ষ্মী দিদির মোয়া-মুড়ি
সময় যেন ফসকে যাওয়া নাটাই থেকে রঙ্গিন ঘুড়ি।
সময় যেন খোলা মাঠে এক পলকে দৌঁড়ে আসা
সময় যেন ময়না টিয়া পাখির সাথে ভালোবাসা।
সময় যেন মন ভরে যায় অবাক করা কলের-গানে
সময় এখন মস্ত পাথর থির হয়ে রয় ব্যাকুল-প্রাণে।


চোখের তারায়

এ তুমি- কেমন তুমি, আয়না ধরো চোখের তারায়
মনের ভুলে এক পলকে চোখ যে আমার দৃষ্টি হারায়।
দৃষ্টি রাখি গাছের পাতায়, দৃষ্টি রাখি ফুলে
দৃষ্টি রাখি বন বাদাড়ে সাগর উপকূলে।
দৃষ্টি আমার দুর সুদুরে, দৃষ্টি অচীন পথে
দৃষ্টি যেন হাওয়ায় ভাসে, হাওয়ার কোন রথে।
দৃষ্টি আমার কেমন যেন আয়না ধরে চোখের আগে
মনের ভুলে এক পলকে, সব কিছুকে নতুন লাগে।
দৃষ্টি আমার দিব্য লোকের রাজহংসীর ডানা
দৃষ্টি যেন অশান্ত ঢেউ, না-মানা এক মানা
দৃষ্টি আমার পথ পেরুনো অজানা এক যাত্রী
ভুলিয়ে রাখে আলতো করে দিন না এখন রাত্রী।


ঘড়ির কাঁটার চেয়ে

সময় কাটে কেমন করে, বুঝতে বড় দায়
বুঝতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা হচ্ছে নিরুপায়।
ঘড়ির বুকে তিনটি কাঁটা ঘুরছে অবিরাম
তিনটি কাঁটার ভিন্ন গতি, ভিন্ন তাদের নাম।
একটা কাঁটা ঘন্টা দেখায়, একটা মিনিট দেখায়
একটা কাঁটা অবিরত সেকেন্ড বলে যায়।
এমনি করে পাল্লা দিয়ে চলছে সময় ধেয়ে
চলছে সবাই, চলছে দ্রুত ঘড়ির কাঁটার চেয়ে।


ঘরের পাখি

এ কেমন অদ্ভুত মন
আকাশটা ফুঁটো হয়ে ঝরে না শ্রাবন।
শ্রাবনের আছে এক সুর
কান্না হাসির মাঝে মিষ্টি মধুর।
কখনো বা সেই সুর রিনিঝিনি বাজে
কখনো মুগ্ধ চোখে কখনো বা লাজে।
কখনো হতাশা আবার কখনো বা খুশি
সব কিছু এই বুকে রাখি দিবানিশি।
বুকটা উদার এক বিশাল আকাশ!
এই বুকে জমে আছে আনন্দ-হুতাশ।
কখন সে বুক থেকে সরাবে পাথর
ঢেলে দেবে মন-ছোঁয়া মনের আদর।
মন তাই উম্মুখ চেয়ে আছে পথ
কখন ঘরের পাখি শোনাবে শপথ।


মধুর বাসর

আজো কী আষাঢ়
আজো কী ঢলনামা মুখর শ্রাবন
আজো কী লুকোঁবে চাঁদ-
ছেড়া কাঁথা মেঘের ওপারে।
উঠোনে আজো কী নামবে বানের নহর।
আজো কী ধানের চারাগাছ
থির থির জলের ওপর দিয়ে উঁকি দেবে।
মাছিরা অদ্ভুত শব্দ তুলে আজো কী
মাছকুটা বারান্দা দখলে নেবে।
নতুন বধুর জড়িপাড় লাল শাড়ি
আজো কী ভিজবে জলে বিষন্ন উঠোনে।
আজ অন্য রকম এক রাত!
আজ শুধু
আলোময় আকাশ কেবলই জোছনা দেবে
কেন না- আজ যে পাখিদের মধুর বাসর।