বরগুনা প্রতিনিধি : নদী প্রধান জেলা বরগুনা জুড়ে রয়েছে বলেশ্বর, বিষখালী, পায়রা, বুড়িশ্বর ও আন্ধার মানিক, এই ৫ নদী। এছাড়াও রয়েছে শতাধিক ছোট-বড় খাল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জেলার স্থানীয়দের অধিকাংশই জীবিকার জন্য নির্ভর করে মাছ চাষের উপর। প্রায় সারাবছরই এসব নদী আর খালে মাছ ধরার পেশায় ব্যস্ত থাকেন জেলার অধিকাংশ অধিবাসীরা।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে নদীতে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার সময় জীবিকার তাগিদে সংসারের সদস্যদের মুখে অন্য যোগাকে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন লক্ষাধিক জেলে। অনেক সময়ে তাদের জাল এমনকি নৌকাটিকে আটক করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি জেলেদের ঝুঁকি কমাতে ও আয়ের উৎস বাড়াতে শুরু হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। নতুন এই মাছ চাষ পদ্ধতি বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এ অঞ্চলের মাছ চাষি ও জেলেদের। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

নদীপ্রধান এ জেলার বেকার যুবক, জেলে ও চাষিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে খাঁচায় মাছ চাষের পদ্ধতি। অধিকাংশ জেলেদের বাড়ির আশেপাশে থাকা নদী-নালা, খাল-বিলে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার দরিদ্র জেলেরা। বরগুনার ছয় উপজেলাতেই জেলেরা এমনকি বেকার যুবকরাও ইতিমধ্যে শুরু করেছেন এই মাছ চাষ প্রকল্প।

সম্প্রতি বরগুনার বামনা উপজেলার আমুয়া খালে এ ধরনের একটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় মাছ চাষি গোলাম মোর্শেদ স্বপন ৮০টি খাঁচা দিয়ে গড়ে তুলেছেন মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প।

গোলাম মোর্শেদ স্বপন জানান, খোলা জলাশয়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতিতে ২০০ বর্গফুটের প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে তার খরচ হয়েছে পড়েছে ১৬ হাজার টাকার মতো। প্রায় ১০ বছর টেকসই প্রতিটি খাঁচায় ১০০০ হাজার তেলাপিয়া মাছ রয়েছে। এই খাচায় ৪ মাস মেয়াদে বছরে ৩ বার চাষ করা যায়।

খাঁচাপ্রতি ৪ মাসে ২৫০ কেজি মাছ উৎপাদন করতে তার মোট খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। প্রথমবারেই প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভের পাশাপাশি পরে প্রতিবার অন্তত ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভ পেয়েছেন তিনি।

তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র তেলাপিয়া নয়, নদী ও পুকুরের সব প্রজাতির মাছই চাষ করা সম্ভব এ খাঁচা পদ্ধতিতে।


বরগুনা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, পুকুরের তুলনায় খাঁচায় মাছ চাষ করলে একদিকে যেমন খাবার সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে মাছের বৃদ্ধিও হয় প্রায় দেড়গুণ। এছাড়া প্রাকৃতিক পানির সরবরাহ ও স্রোতের কারণে মাছের রোগ-ব্যাধিও অনেক কম হয়। ফলে চাষিদের বাড়তি সার ও ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়না, তেমনি মাছের মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে খুব কম।

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা জানান, সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা পেলে এই মাছ চাষ এলাকাবাসীর দারিদ্রতা দুড় করতে পারে।

তিনি বলেন, নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে জেলেদের এই চাষ পদ্ধতির আওতায় আনলে একদিকে যেমন জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে, তেমনি রক্ষা পাবে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ।


(এমএইচ/এএস/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪)