চৌধুরী আ. হান্নান : একজন পলাতক আসামির প্রলাপ-বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কোন মানে হয় না। একটি অপ্রাসংগিক বিষয়কে রাজনীতির ময়দানে প্রাসংগিক করে তোলা হচ্ছে। ফলে চায়ের দোকানে, মাঠে ময়দানে আলাপচারিতায় সে নামটি বার বার উঠে আসছে। তিনি ইতিপূর্বে ও সীমা লংঘন করেছিলেন। সরকারের সমান্তরাল আরও শক্তিশালী ‘সরকার ’ তিনি পরিচালনা করতেন। রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতার সুইচটা তার হাতেই ছিল। তার বাবার বয়সের সিনিয়র নেতারা তাকে দেখে নিজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেন।

যে সংসারের পিতা নয়, সন্তানই বেশি ক্ষমতাধর, সন্তানকে দেখে পিতা মাতা সন্ত্রস্ত থাকে, সে সংসার টিকে না। ফলে যা হবার তাই হয়েছেÑ ক্ষমতার দর্প চূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি এখন নানাবিধ মামলার আসামি, গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। বিএনপি শাসনামলে এই নেতা জনগণকে যে ‘উপহার’ দিয়েছেন, তা এখন সুদে আসলে ফেরত পাওয়ার সময় এসছে। প্রতিটি ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকবে তো। তা না হলে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি মিছে হয়ে যাবে যে!

সন্তান যখন সুশিক্ষিত না হয়, তার দায় পিতা মাতা এড়াতে পারেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুই পুত্রকে ‘মানুষ’ করতে না পারার ব্যর্থতা কেবল তার একার নয়, জাতির জন্যও বড় দুঃখ। কারণ প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিধবা পত্নী খালেদা জিয়া তার নাবালক সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষা ও ভরণ-পোষণের জন্য রাষ্ট্রীয় অনুদান গ্রহণ করেছেন।

আমরা জানি মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য ছিলেন এবং তাদের পারিবারিক বিপর্যয় ঠোকাতেও বঙ্গবন্ধু হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ দেশবাসী অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে প্রত্যক্ষ করে চলেছে যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতি কতটা বিদ্বেষ পোষণ করেন। এর কারণ কি ? একটা কারণ স্পষ্ট। তা হলো ধর্ম ব্যবসায়ী, স্বাধীনতা বিরোধীসহ সকল প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে আকৃষ্ট করে দেশকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা। আর দ্বিতীয় কারণটি সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়।

আমাদের দুঃখ বাংলাদেশের জাতির পিতাকে সকল সমালোচনার উর্ধ্বে রেখে রাজনৈতিক কা- পরিচালনা করার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা আজও সম্ভব হয়নি। আমাদের কামনা ও বিশ্বাসে মসয়ই একদিন সব ঠিক করে দেবে। একজন ব্যক্তির জীবনে ৪৩ বছর অনেক লম্বা সময়, কিন্তু একটি জাতির জন্য নয়। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের ভাষায়Ñ‘একটি অনিচ্ছুক জাতিকে’ বঙ্গবন্ধু ৯ মাসে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। স্বাধীনতার মর্ম আর বঙ্গবন্ধুর অবদান বুঝতে সময় তো লাগবেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য অনেক, ব্যর্থতা ও কম নয়। বর্তমানে বিরোধী দল হীন (যা আছে তা না থাকাই ভাল) সংসদ একটি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের সরকার তৈরিতে সহায়ক ভ’মিকা রাখার আশংকা প্রবল। শেখ হাসিনা যদি তাঁর তোষামোদকারী মন্ত্রী/উপদেষ্টার পরামর্শ কম আমলে নিয়ে নিজের চোখ কান খোলা রেখে দেশ পরিচালনা করেন তা হলে জনগণের কাছে যাওয়া সহজ হবে।

সংসদে বিরোধী দল না থাক, গত নির্বাচন নিয়ে যতই বির্তক থাক দেশে এখন স্থিতিশীলতা বিরাজমান। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। রাজনৈতিক ব্যর্থতার জন্য যারা এখন নিজের মাথার চুল ছিড়ছেন, প্রলাপ বকছেন তাদের এখন বড় দুঃসময়। জিয়া পরিবার কর্তৃক জাতির জনকের প্রতি কুৎসা রটনা এই প্রথম নয়, যত অসত্য তথ্য প্রচার করুক না কেন তা কখন ও এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। বর্তমান রাজনৈতিক স্রোত অব্যাহত থাকলে তারা একদিন জাতীয় রাজনীতির মূলধারার বাইরে চলে যাবে, পরগাছায় পরিণত হবে। পিঁপড়ার পাখা গজায় কখন ? ওদের এখন সেই সময়।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খানের একটি লেখার উদ্ধৃতি দিতে চাই।

‘তার (জিয়ার) স্ত্রী এবং মত ও পথভ্রষ্ট পুত্র কীভাবে এত বিবেক বর্জিত কথাবার্তা বলতে পারলেন ? যারা এভাবে কথা বলতে পারেন, এ ভাবে ভাবতে পারেন, তাদের ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলা যায়, তারা বিধাতার সৃষ্টির চরম অপচয়।’ (সমকাল, ৮ এপ্রিল, ১৪)

লেখক : সাবেক ব্যাংকার