শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের উত্তর তারাবুনিয়া গ্রামে বিয়ের আগের দিন বরের গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠানে গভীর রাতে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে বর সেলিম সরকারসহ দুই নারী ও দুই শিশু। এসিডে দগ্ধ হওয়া রুগিদের প্রথমে চাঁদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের কালামিয়া সরকার কান্দি গ্রামের ইদ্রিস আলী সরকারের পুত্র সেলিম সরকার (২৮) এর সাথে একই উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের আনুসরকারের কান্দি গ্রামের ফারুখ রাড়ির মেয়ে তানজিলা আক্তার শিরোমনির সাথে বিয়ের দিন ধার্য করা হয় বছরের প্রথম দিন বৃহষ্পতিবার। বিয়ের আগের রাতে সোয়া ১২টার সময় বর সেলিমের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে জেনারেটরের আলো নিভিয়ে দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে বর সেলিম সহ গায়ে হলুদের মঞ্চে থাকা ৫ বছরের শিশু সিয়াম, ৬ বছরের শিশু রাবেয়া, গৃহবধু শাহিনা আক্তার (২২) ও তহুরা বেগম (১৭) এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এসিড লেগে ঝলসে যায়। সেলিম সরকার ও শিশু শিয়াম মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। ওই রাতেই আহতদের ট্রলার যোগে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

চাঁদপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাতমিক চিকিৎসার পরে ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দিলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এলাকাবাসী ধারনা করছে পার্শবর্তি চরবাগা ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মাষ্টারের ছেলে সিফাদের সাথে শিরোমনির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর সিফাদই এসিড নিক্ষেপ করে থাকতে পারে।

করেন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার মা-বাবা সজ্ঞা হারিয়ে অচেতন অবস্থায় রয়েছে। বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন হলেও আমন্ত্রিত অতিথিরা এ ঘটনায় সকলেই হতবিহবল হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এলাবাসীর ধারনা অস্বিকার করে শিরোমনির চাচা ছোহরাব রাড়ি বলেছেন, আমরা সিফাদ নামে কাউকে চিনি না এমনকি আমাদের মেয়ের সাথে কারো প্রেমের সম্পর্কও ছিলনা। সেলিম সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে বিয়ের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউসুস মোল্যা জানিয়েছেন, সেলিম ও শিরোমনির বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই একই উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মাষ্টারের বখাটে ছেলে সিফাদ হোসেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বর পক্ষকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে বরের অভিভাবকরা জাহাঙ্গীর মাষ্টারের কাছে তার ছেলের হুমকি প্রদানের বিষয়ে জানিয়েও কোন ফল পায়নি। আমি বিশ্বাস করি বখাটে সিফাতই এ এসিড সন্ত্রাস ঘটিয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্তমূলক বিচার দাবি করছি।

সেলিম সরকারের বড় ভাই সাদেক হোসেন সরকার বলেন, গত একমাস আগে শিরোমনির সাথে সেলিমের বিয়ে ঠিক হয়। এর কয়েক দিন পর থেকেই সিফাদ নামে এক বখাটে আমাদের এ বিয়ে বন্ধের জন্য টেলিফোনে বিভিন্ন রকমের হুমকি দিয়ে আসছিল। গতকাল সেলিমের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আগে সিফাদকে এ এলাকায় ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। রাত ১২টার সময় সেলিমের গায়ে হলুদের প্রাথমিক পর্ব শেষ হলে আমার দুইজন শিশু ভাগ্নে-ভাগ্নিসহ কয়েকজনে মিলে সেলিমের হাতে মেহেদী পরাচ্ছিল। এ সময় রাত আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে জেনারেটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আলো নিভিয়ে দিয়ে ওই মঞ্চে এসিড নিক্ষেপ করে সিফাদ পালিয়ে যায়। আমার ভাই এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আমরা এই সন্ত্রাসী সিফাদ ও তার দোসরদের ফাঁসি চাই।

সখিরপুর থানার ওসি সমীর কুমার সরকার বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসিড নিক্ষেপের আলামত জব্দ করেছি। থানায় মামলার প্রস্তুুতি চলছে। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আটক করে যথাযথ বিচারের সম্মুখিন করা হবে।

(কেএনআই/এএস/জানুয়ারি ০১, ২০১৫)