সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সারাদেশে নারী নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা ও গুমের প্রতিবাদে আশাশুনি- সাতক্ষীরা সড়কের সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

সাতক্ষীরা শহরের রইচপুরের ১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া আসমা খাতুনকে ধর্ষণের পর সাড়ে সাত মাস অন্তঃস্বত্বা অবস্থায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারিরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা না দিলেও পুলিশ মামলা করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাতক্ষীরা হিউমান রাইটস ফোরাম ও নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে আয়োজিত দেশব্যাপি নারী নির্যাতন, হত্যা, গুম ও অপহরনের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরো বলেন, এক মাস আগে কালীগঞ্জের রুবিনা খাতুনকে নৃশংসভাবে তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি হত্যা করলেও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেনি। গত ১৯ মার্চ পলাশপোল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী লাবনী পরিভিন ও তার মা জামিলা খাতুন গৃহকর্তা কোমরউদ্দিনের দুছলে ইমন ও নয়নের হাতে নির্যাতিত হয়। মোবাইলে জানানোর পরে পুলিশ হামলাকারি নয়ন ও ইমনকে আটক করলেও পরে গৃহকর্তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে উপপরিদর্শক হেকমত আলী ও তদন্ত ওসি মোঃ নাসিরউদ্দিন মামলার বাদি করানোর নামে থানায় নিয়ে যেয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জেল হাজতে পাঠায়।

এ ছাড়া গত ২ এপ্রিল শ্যামনগরের মহসিন ডিগ্রী কলেজর ছাত্রী পপি বিশ্বাসকে উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জিএম আব্দুর রব অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করলেও সন্ত্রসীদের ভয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা দিতে পারেনি। এমনকি ওই মনিরুলকে ছাত্রলীগ থেকে বের করে দিলে সে উপজেলা সৈনিকলীগের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

৫ এপ্রিল শ্যামনগর এ রউফ একাডেমীর নবম শ্রেণীর ছাত্রী মমতা রানী ম-ল ওরফে টুম্পাকে অপহরণ করার ঘটনায় তার বাবা নির্মল বাদি হয়ে মামলা করলেও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান আজো আসামী ছাত্রলীগ কর্মী মনিরুল ইসলামকে ধরতে পারেননি।

একইভাবে ৩০ এপ্রিল একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী লিপিকা হাউলিকে রাস্তার উপরে ফেলে বিবস্ত্র করে ছাত্রলীগ কর্মী শিমুল। এ ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের ছাত্রছাত্রীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করলেও স্থানীয় সাংসদ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করে দেন।

ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও সাংসদ বা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে লোক লজ্জা ও নতুন করে হামলার ভয়ে ওই ছাত্রী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব ঘটনার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেন তারা। একইসাথে বক্তারা নারায়নগঞ্জে সাতজনতে অপহরণের পর হত্যাসহ দেশজুড়ে একের পর এক নারী নির্যাতন, গুম, হত্যা ও অপহরণের প্রতিবাদ জানান।

পরে তারা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক স্মারকলিপি পেশ করেন।

আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, হিউমান রাইটস ফোরামের সদস্য সাংবাদিক কল্যাণ ব্যাণার্জি , সদস্য সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধাব চন্দ্র দত্ত, অপরেশ পাল, নিহত রুবিনার ভাই জিএম ফয়সাল আহম্মেদ, অ্যাড. সুলতান আহম্মেদ মিলন, ভূমিহীন নেতা আলী নূর খান বাবুল, ডেইজি আহম্মেদ, লুইস রানা গাইন, আবু জাফর প্রমুখ।

(আরকে/জেএ/মে ০৬, ২০১৪)