নিউজ ডেস্ক : একাকিত্ব মানেই একা থাকা নয়। বরং এটি এক ধরনের মনের বোধ। ফলে মানুষ নিজেকে নিঃসঙ্গ বা একাকী ভাবতে পছন্দ করে। বন্ধু, আড্ডা বা পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যেও অনেকে একাকিত্বের মধ্যে সুখ খুঁজতে চায়। দীর্ঘ সম্পর্ক কাটিয়ে ওঠা বা সম্পর্কের বেড়াজালে অস্বস্তিবোধ হওয়া এসবই একাকিত্বের কারণ হয়ে কাজ করে। একাকী থেকে নিজেকে কোনো কারণে স্বস্তি দেওয়ার প্রবণতাও আমাদের মধ্যে কম নয়।

বন্ধু বা আত্মীয় ছাড়াও এই একাকিত্ববোধ কখনও কখনও পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। ফলে পরিবার বা পরিবারের বাইরের সম্পর্কগুলোও নাজুক হয়ে যায়।
এ নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একাকিত্ববোধ একটি মানসিক সমস্যা। যেখানে মানুষ নিজেকে খালি, আমার কিছু নেই, আমাকে কেউ চায় না, অযাচিত শূন্যতা অথবা নিজেকে শূন্য করে রাখাকেই বোঝায়। একই সঙ্গে যারা একা, তারা অন্যদের থেকে নিজেকে ভিন্নভাবে রাখতেও বেশি পছন্দ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, 'একাকিত্ব' মানেই একা থাকা নয়। বরং এটি এক ধরনের মনের বোধ। ফলে মানুষ নিজেকে নিঃসঙ্গ বা একাকী ভাবতে পছন্দ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেকেই কলেজ/ইউনিভার্সিটির বন্ধু-বান্ধবীদের আড্ডার মধ্যেও নিজেকে একা ভাবে। অথবা একজন প্রবাসী যখন দেশের বাইরে দিনযাপন করে সে তখন সবার ভিড়েও নিজেকে একমনা করে রাখে। এসব কিছুই প্রতিটি মানুষের জন্য দীর্ঘ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কেন এই এককিত্ব :
গবেষণা মতে, একাকিত্ববোধের বড় কারণটি জেনেটিকভাবেই সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে পারিপাশ্বিকতা। ফলে সঙ্গী বা আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে থাকা, তাদের থেকে দূরে থাকা, নতুন পরিবেশে নিজেকে তুলে ধরা, বিবাহবিচ্ছেদ, কাছের কারও মৃত্যু_ এসবই একাকিত্বের অনুভূতি আনতে পারে। এছাড়া নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কম থাকা, হীনম্মন্যতার অভাবে নিজেকে অবাঞ্ছিত করা বা অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্যহীন বলে মনে করার বিষয়াদিও একাকিত্বের কারণ হতে পারে।
আবার মনের বিষণ্নতার কারণেও এ মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্কিটসৌফ্লিনিয়া বা অহেতুক ভয়ের কারণে সমাজের মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারার ক্ষমতা নিজের মধ্যে লোপ পেতে থাকে। ব্যক্তিত্ব বিষয়ক মানসিক সমস্যার কারণে সম্পর্ক রক্ষার দক্ষতা কমে যেতে পারে।
তবে বহুদিনের শারীরিক সমস্যার কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা কি-না নিজের অজান্তেই নিজের মধ্যে একাকিত্ব ভাব বাড়িয়ে দেয়। একাকিত্বের ফলে বিষণ্নতা, আত্মহননের চেষ্টা বা আত্মহত্যা, মানসিক চাপ ধারণের ক্ষমতা হ্রাস, অমানসিক কাজের প্রতি আগ্রহ, অপরাধ বা নেশাভিত্তিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা, এমনকি ব্যক্তির স্মরণশক্তিও কমে আসতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, একাকিত্ববোধ নিজের মধ্যে খাবার চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয়, ঘুম কমিয়ে দেয় এবং শরীরের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে খুব অল্প বয়সে চেহারার মধ্যে বয়স্ক ছাপ বাড়িয়ে দেয়।
আর একা থাকা নয় :
এই একাকিত্ববোধ থেকে বাঁচতে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। যুক্ত হতে হবে সামাজিক ও আনন্দদায়ক কাজের সঙ্গে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেখানে অনেকের সঙ্গে সঙ্গ মিলবে সেখানে সামাজিক গুরুত্বটা বাড়িয়ে দিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সবার মধ্য থেকে নিজের প্রিয় কোনো বন্ধু বা সঙ্গী খুঁজে নিতে হবে। সময় পেলেই ঘুরে আসতে হবে জানা-অজানা কোনো প্রান্ত থেকে। এরপরও কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষঙ্গের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে।
(ওএস/এটি/এএস/মে ০৬, ২০১৪)