স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমান ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্য দুই জন হলেন- তার বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি (২৭), মিজানুর রহমান রনি (২৫)।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে বিচারক মো. জহুরুল হক অভিযোগ গঠন করেন।

এর আগে এদিন বেলা সাড়ে এগারটায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়।

শুনানিকালে ঐশীর আইনজীবী মাহবুবুর রহমান রানা মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে মামলার দায় থেকে ঐশীর অব্যাহতি দাবি করেন।

এসময় বিচারক বলেন, ‘মামলার তদন্ত নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আপনার বক্তব্য দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মামলার চার্জে কোনো ফাঁক ফোকর থাকলে সেসব নিয়ে আপনি কথা বলেন।’

এরপর ওই আইনজীবী ঐশীর জামিন প্রার্থনা করে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়ার পর হইতে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস যাবত ঐশী জেলহাজতে আছেন, এ অবস্থায় তাকে জামিন দেয়া যেতে পারে।’

এরপর ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান জনির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগে ঐশীকে আশ্রয় দেয়া ছাড়া এই আসামির বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই।’

ঘটনার আগে-পরে ঐশীর সঙ্গে রনির কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি তাকে নির্দোষ বিবেচনায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দাবি করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ আলম তালুকদার বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আসামিদের ও সাক্ষিদের স্বীকারোক্তি রয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের অব্যাহতি বা জামিন কোনোটিরই কোনো সুযোগ নেই।’

শেষে বিচারক ঐশীর কাছে জানতে চান যে সে দোষী না নির্দোষ। জবাবে ঐশী নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে বিচারক চার্জ গঠন করে আগামী ৫ জুন সাক্ষির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এছাড়া একই ঘটনায় পৃথক মামলায় অভিযুক্ত ঐশীদের গৃহকর্মী সুমির বিরুদ্ধে চার্জ শুনানির জন্য আগামী ২০ মে দিন ধার্য করে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

গত ৯ মার্চ ডিবি ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। একটি চার্জশিটে ঐশী ছাড়াও তার বন্ধু জনি ও রনিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অপর চার্জশিটে হতাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে ঐশী কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐশী অত্যন্ত কৌশলী ও সুচতুর মেয়ে। পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ায় সে অত্যন্ত আদরের ছিল। এ কারণে সে ইচ্ছামত চলত। আসাদুজ্জামান জনি এবং মিজানুর রহমান রনির মতো উশৃঙ্খল বন্ধুদের সঙ্গে মিশে পরিবারের বাইরের পরিবেশের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ওই কারণে পরিবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বাবা-মায়ের শাসন তার প্রতি অমানবিক আচরণ হিসেবে ভাবত।

বন্ধু জনি তাকে দুবাইয়ে ড্যান্স করার প্রস্তাব দেয়। দুবাই যাওয়ার জন্য বাবা মাহফুজুর রহমানের কাছে তিরিশ হাজার টাকা চায় ঐশী। বাবা দুবাই যেতে নিষেধ করলে সে ঘটনার একমাস আগে চামেলীবাগের বাসা থেকে বনশ্রীতে বন্ধু জনির সহায়তায় ১৫ দিন সাবলেট ছিল। ওইসময়ই জনিকে নিয়ে বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সুচতুর ঐশী বাবা-মাকে হত্যার পর নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে মা স্বপ্না রহমানের মোবাইল ফোন থেকে বন্ধুর খালার বাড়িতে আশ্রয় চাইতে মিথ্যা কথা বলে বাসা থেকে মালামালসহ পালিয়ে যায়। যে ডেগার জাতীয় ছোরা দিয়ে বাবা-মাকে হত্যা করেছিল এবং যে কাপে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কফি পান করিয়েছিল তা ধীরস্থিরভাবে ধুয়ে হাতের ছাপ নষ্ট করে ফেলে।

এসময় ভাই ওহী যাতে ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হতে পারে এ জন্য সে মা-বাবাকে হত্যার সময় তাকে বাথরুমে আটকে রাখে। হত্যার পর আলামত রক্ত মুছে, নিজে গোসল করে এবং ওহীকে বাথরুম থেকে বের করে।

খুন করার পর সে অভিজ্ঞ খুনির মতো মায়ের হাতের চুরি ও আংটি খুলে নেয়। গৃহকর্মী সুমিকে দিয়ে আলুর চিপস ভেজে খায়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব আচরণ ঐশীর মানসিক পরিপক্কতার প্রমাণ দেয়।

(ওএস/এটি/মে ০৬, ২০১৪)