ফরিদপুর প্রতিনিধি : বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন করা নতুন জাতের জিংক সমৃদ্ধ ধান পরীক্ষামূলকভাবে ফরিদপুরে উৎপাদিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি এটিই পৃথিবীর প্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধান। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ব্রি-৬২ ও ব্রি-৬৪।

ফরিদপুরের আবহাওয়ায় নতুন জাতের এ ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে কৃষকদের দাবি। অন্যান্য ধানের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ফরিদপুরে নগরকান্দা উপজেলার তালমা এলাকার মানিকনগর মাঠসহ আশেপাশের এলাকার ৫০ জন চাষী জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদ করেছে। ভালো ফলন দেখে খুশি কৃষকরাও। আর জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) ও হারভেষ্টপ্লাস বাংলাদেশ। জিংক সমৃদ্ধ ধান মানুষের বিশেষ করে শিশুদের রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি মেধা ও শারীরিক বিকাশের বিশেষ ভুমিকা রাখবে। আর তাই পর্যায়ক্রমে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল অন্যান্য ধানেও জিংক প্রবেশের মাধ্যমে সকল ধানকেই জিংক সমৃদ্ধ করা হবে।
কয়েকজন চাষী জানান, অন্যান্য ধানের মতই জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষাবাদ খরচ একই। তবে উৎপাদনকালীন সময় কম লাগায় কৃষকরা এ ধান আবাদ করে খুশি। তাদের মতে, অন্যান্য ধান উৎপাদনে ১৬০ দিন লাগলেও জিংক সমৃদ্ধ ব্রি- ৬২ ও ব্রি ৬৪ জাতের ধান উৎপাদনে সময় লাগে ১২০ দিন। চাষীরা জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদ সম্পর্কে জেনে ও ফলন দেখে অনেকেই এ ধান আবাদে আগ্রহী হচ্ছে।
জিংক সমৃদ্ধ ধান আবাদে প্রযুক্তিদানকারী প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি)’র নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফুল হাসান জানান, ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহী হওয়ায় আগামী মৌসুমে আরো বেশি সংখ্যক কৃষকদের বীজ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হবে। তিনি জানান, গানে গানে ছন্দে ছন্দে ও কবিতায় কবিতায় কৃষাণ কৃষাণীদের জিংক সমৃদ্ধ ধানের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষন দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জাত উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞাণিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন জানান, মানব দেহের জিংকের অভাব পুরণ করতে এই ধানে জিংকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধানের ভাত খেলে মেধা বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক বৃদ্ধি ঘটবে। তিনি আরো বলেন, এই ধানে অন্যান্য ধানের চেয়ে দ্বিগুন পরিমান জিংক রয়েছে। তিনি দাবি করেন সাধারণ ধানে ৯ থেকে ১২ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে আর জিংক সমৃদ্ধ ধানে ২৪ মিলিগ্রাম পরিমান জিংক রয়েছে।
সোমবার জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা এলাকার মানিকনগরে এক প্রদর্শনী ও জাত অবহিতকরণ সমাবেশে ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, দেশের ৪৪ ভাগ শিশুর জিংকের অভাবে মেধা ও শারীরিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। যা জিংক সমৃদ্ধ ধানের ভাত খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া এ ধানে রয়েছে সর্বোচ্চ নয় ভাগ প্রোটিন। জেলার কৃষকদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব উচ্চ ফলনশীল জিংংক সমৃদ্ধ ধানের বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার।
(আরইআর/এএস/মে ০৬, ২০১৪)