সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বনবিভাগের অভিযানে অস্ত্র গোলাবারুদ, ট্রলার, স্পীড বোর্ড ও হরিণের মাংসসহ আটককৃত চার হরিণ শিকারীকে জামিন দিয়েছে আদালত। খুলনার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম-৩ এর আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামান তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা দণ্ডে জামিনে মুক্তি দেন।
এদিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের মৃত কোরবান মোড়লের ছেলে খুলনা বিভাগের কুখ্যাত হরিণ শিকারী সাত্তার মোড়ল ট্রলারও স্পীডসহ বন্দুক গুলি ও হরিণের মাংস ফেলে বনের ভিতরে পালিয়ে যাওয়ার পরও তার নামে মামলা না হওয়া ও আটককৃত তার চার সহযোগিকে জেল হাজতে পাঠানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পাওয়ার ঘটনায় সাধারন মানুষ বনবিভাগ ও বিচারবিভাগের প্রতি আস্তা হারিয়ে ফেলেছে। সাত্তার মোড়লের লস্বা হাতের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে বনবিভাগ।

জামিনপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের হাসান মোড়ল (২৫) , নোয়াখালি জেলার বেগমপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম স্বপন (৫০), খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ছোট আংটিহারা গ্রামের ভাড়াটিয়া শিকারী আকবর গাজী (২৫) ও একই জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের বাবলুর রহমান (৫০)।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে শুক্রবার বিকেলে বুড়িগোয়ালিনি স্টেশন থেকে ভ্রমনের পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যান কালীগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের সাত্তার মোড়ল ও তার ১১ সহযোগি। তাদের নিরাপত্তার জন্য বন্দুকধারি কলাগাছি ফাঁড়ির বনপ্রহরী নুরুল ইসলাম ও রাসেলকে সঙ্গে দেওয়া হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্টেশন অফিসার জানান, সাত্তার মোড়লের ট্রলার ও স্পীড বোর্টে তিনটি বন্দুক , দু’টো পিস্তল, তিন শতাধিক গুলি, পাঁচটি ধারালো দা, ২০ বোতলের বেশি বিলাতি মদ ছিল। খুলনা বনবিভাগের একজন প্রভাবশালী বনপ্রহরী মিলন এর নির্দেশনা অনুযায়ি ওই বোর্ড ও ট্রলারে কোন তল্লাশি করা হয়নি। ভ্রমনে যেয়ে আটক হওয়া সিরাজুল ইসলাম স্বপন একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও এক মহিলা মন্ত্রীর ভাগ্নে। তিনি একজন ঠাণ্ডা পানীয় তৈরির কারখানার মালিক। তিনি মনপুরা সাত্তার মোড়লকে নিয়ে মনপুরা দীপে কয়েকবার শিকারে যেয়ে হাত পাকিয়েছেন। ৩ মে বনবিভাগের হাতে স্বপেনর আটক হওয়া ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে সাত্তার মোড়লের জীবন বাঁচানোর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বনপ্রহরী নুরল ইসলাম ও রাসেলের উপস্থিতিতে দেদারসে হরিণ শিকার করার ঘটনায় আটক করার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তিনি।
বনকর্মকর্তা আরো বলেন, অস্ত্র, গোলাবারুদ, হরিণের মাংসসহ সাত্তার মোড়লের মালিকানাধীন শাওন ফিস লেখা একটি ট্রলার ও স্পীড বোর্ট আটক করা হয় গত ৩ মে। জব্দ করা হয় মালিক আজিজ শিকারীর বন্দুকের লাইসেন্স। সবকিছু জেনেও সাত্তার মোড়ল, বন্দুকের মালিক আজিজ শিকারীদের নামে মামলা দেওয়া হয়নি। উপরন্তু মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামীদের জামিন সুন্দরবনের শিকারী ও বনদস্যুদের উজ্জীবিত করবে। তেমনি হুমকির মধ্যে থাকা ছাড়াও অভিযান পরিচালনায় উৎসাহ হারাবে বনকর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে সুন্দরবনে কর্মরত কয়েকজন জেলে জানান, বনবিভাগের তাড়া খেয়ে বনের গহীনে পালিয়ে থাকে সাত্তার মোড়ল। ৩ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মোবাইল করে শ্যামনগরের বাধঘাটার এসকে সুন্দরবন টুরিজমের মালিক এসএম হুমায়ুন কবীর ছাকিকে মোবাইলে ডেকে পাঠাকাটায় এসে তাকেসহ সহযোগি সাতজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে বলেন। ছাকি তাতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি তার ব্যবসায়িক পার্টনার বনবিভাগের খুলনা অফিসের প্রভাবশালি বনপ্রহরী মিলন ও সাতক্ষীরার এক সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করেন সাত্তার মোড়ল। একপর্যায়ে তাদের অনুরোধে ছাকি গত ৪ মে বিকেলে ছাত্তার মোড়ল ও তার সহযোগিদের উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের খুলনা শাখার মামলা পরিচালনাকারি ফরেষ্ট রেঞ্জার নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাস ও খুলনার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম-৩ আদালতের পেশকার বিশ্বজিৎ কুমার রায় জানান, ৩ মে আটকৃকত পিআরও-৫, পাট/২০১৩/২০১৪ নং মামলার চার আসামীকে সোমবার বিকেলে বিচারক মো. হাদিউজ্জামান ১০ হাজার টাকার বন্ডে ধার্য তারিখ আগামি ২০ মে পর্যন্ত অস্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। সে অনুযায়ি সন্ধ্যার পরপরই আসামীরা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে বিকেলে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ফরেষ্ট অফিসের পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়ির পাঠাকাটা নামকস্থানে অভিযান চলিয়ে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের কুখ্যাত হরিণ শিকারী সাত্তার মোড়লের মালিকানাধীন একটি স্পীড বোর্ড, একটি আধুনিক ট্রলার ছাড়াও আজিজ শিকারীর লাইসেন্সকৃত একটি জার্মানে তৈরি বন্দুক, ৪৮ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, দু’রাউন্ড বন্দুকের গুলির খোসা, ২০ রাউ- পিস্তলের গুলি ও ২০ কেজি কাচা ও পাঁচ কেজি রান্না করা হরিণের মাংস আটক করে। এ সময় সাত্তার মোড়লসহ আটজন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ৪ মে পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল হক বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাতনামা আটজনের নামে বনআইনে মামলা দায়ের করেন।
(আরকে/এএস/মে ০৬, ২০১৪)