বগুড়া থেকে আব্দুস সালাম বাবু : দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানা অবরোধে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে পিকনিক আর শিক্ষা সফর। তরুণ, যুবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ক্লাব, পাড়া মহল্লার পিকনিকের ভ্রমণ না থাকায় ভাল নেই বগুড়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বগুড়ার দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক হোটেল-মোটেল আর ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুনছে লোকসান।

ডিসেম্বর মাসজুড়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নবাববাড়ি, গোকুলের মেধ বা বেহুলা লক্ষিন্দারের বাসর ঘর, ভাসুবিহার, মহাস্থান যাদুঘর, বগুড়ার শেরপুরে মোঘল আমলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদ, কয়েক’শ বছরের পুরানো রানী ভবানী মন্দির, সাউদিয়া পার্ক, মসল্লা গবেষণা কেন্দ্র, নওগাঁর পাহাড়পুর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দল বেঁধে ভ্রমণে আসতো। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন দেশী-বিদেশী পর্যটক বা ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণা নেই।

জানা যায়, বছরের শেষে দিকে এসে ডিসেম্বর মাসে বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে পিকনিক আমেজ বয়ে যায়। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুল, কলেজ ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষা সফর করে থাকে। পাড়া মহল্লার তরুণ-যুবকরা দল বেঁধে বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে আসতো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজাকি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ভ্রমণ করতো। কিন্তু চলতি বছরে ডিসেম্বর মাসে তেমনটি হয়নি। জানুযারী মাসের প্রথম দিন দুই একটি পিকনিক বা শিক্ষা সফরের বাস দেখা গেলেও এখন অবরোধের কারণে একটি বাসও দেখা যায়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানা অবরোধে হারিয়ে যেতে বসেছে সংগঠনগুলোর বিনোদন সফর।

দেশীয় এসব সংগঠনের পাশাপাশি বগুড়ায় মহাস্থানগড়, ভাসু বিহার, গোকুল মেধ বা বেহুলা লক্ষিণদার এর বাসর ঘর, বগুড়ার শেরপুরে সুপ্রাচিন রাণীভবানীর মন্দির, মোঘল আমলে নির্মিত (কথিত) খেরুয়া মসজিদসসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিদেশী পর্যটকও আসতো। ডিসেম্বর মাসজুড়ে বিভিন্ন জেলা ও দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকে ভরা থাকতো। তাদের পদচারনায় মুখিয়ে থাকতো বগুড়ার মহাস্থানগড়, নবাববাড়ি, গোকুলের মেধ, মহাস্থান যাদুঘর, বগুড়ার শেরপুরের মসজিদ রানী ভবানী মন্দির, সাউদিয়া পার্ক, ভাসুবিহার, মসল্লা গবেষনা কেন্দ্র, নওগাঁর পাহাড়পুর পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আর এই পর্যটন ও দর্শনীয়স্থানগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক হোটেল মোটেল ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছেন।

বগুড়ার মহাস্থান যাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, ডিসেম্বরের এ মাসে দেশি বিদেশী পর্যটক আর ভ্রমণ পিপাসু দিয়ে ভরে থাকে। কিন্তু এবছর সেটা হয়নি। শুধু বগুড়া শহর ও শহরের আশপাশের সাধরণ দর্শনার্থীরা আসছে। বগুড়ার শহরের শহীদ খোকন পার্কের আড্ডার সাহিত্য কর্মীরা জানান, ৬ জানুযারী তাদের দল বেধে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি ভ্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বা অবরোধ থাকায় সে ভ্রমণ বাতিল করতে হয়েছে। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ব্যবসায়ি সোহলে রানা জানান, বছরের শেষের দিকে এবং শুরুর সময় মহাস্থানগড়ে দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় হয়। কিন্তু এবছর তেমন ভিড় নেই। দুই চারটি বাস দেখা গেছে মাত্র। ব্যবসায় একেবারে মন্দা। লোকজন খুব কম আসছে। মহাস্থানগড়ে কটকটি বিক্রেতা লাল মিয়া জানান, গত বছর এমন সময় দিনে প্রায় ৪ থেকে ৫ মন করে কটকটি বিক্রি হতো। কিন্তু এবার সে বিক্রি নেই।

প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ব্যবসা নেই। দর্শনার্থীরাও আসছে না। বগুড়া শহরের শতবর্ষী হোটেল আকবরিয়া আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থী এসে আকবরিয়া আবাসিক হটোলে উঠতো। কিন্তু পরিবহন চলাচল না করায় আবাসিক হোটেলের সেই ব্যবসা নেই। আবাসিক খাতের আয় দিয়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ হচ্ছে না। এদিকে, বগুড়া জেলার মোকামতলা থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত হাইওয়ে মোটেল হোটেল গড়ে উঠেছে। হোটেল মোটেলের সংখ্যা বেশি হলেও একটি মাত্র ফোর স্টার হোটল নাজ গার্ডেন রয়েছে বগুড়া শহরের ছিলিমপুরে। বিশাল জায়গা আর আকর্ষনীয়ভাবে গড়ে তোলা ফোরস্টার হোটেলটিও এখন আর ভাল ব্যবসা করতে পারছে না।

টানা অবরোধে দেশী বিদেশী পর্যটক খুব কম আসছে। আশপাশের ছোট পরিবার ছাড়া তেমন কোন ক্রেতাসমাগম নেই। মানসম্পন্ন ৭৮টি আবাসিক রুম রয়েছে। সভা সেমিনার, বিয়ে, প্রীতি ভোজসহ অনুষ্ঠান লেগে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্দা অবস্থা চলছে। বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কজুড়ে শহরের ফুলদিঘিতে হোটেল সিয়েস্টা, বনানী মোড়ে পর্যটন মোটেল, কলোনীতে নর্থওয়ে মোটেল, চারমাথায় সেঞ্চুরী মোটেল, মোটেল সেফওয়ে, শেরপুরে জলযোগ, সাউদিয়াসহ শতাধিক হোটেল মোটেল থাকলেও এখন সেসবের ব্যবসা মন্দ চলছে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

(এএস/জানুয়ারি ০৮, ২০১৫)