বাগেরহাট প্রতিনিধি : বুধবার থেকে সরকার সুন্দরবনের শেলা নদী দিয়ে পুনরায় নৌযান চলাচল চালু করায় আবারও হুমকিতে পড়বে সুন্দরবন। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি জানান, গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মধ্যবর্তী শেলা নদীর মৃগামারী এলাকায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস ওয়েল নিয়ে “ওটি সাউদার্ন ষ্টার-৭” নামে একটি ট্যাংকার ডুবে যায়। এর ফলে ট্যাংকারের বিপুল পরিমান তেল শেলা চ্যানেল হয়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনের উপর নেমে আসে মহাবিপর্যয়। এঘটনার জন্য তাৎক্ষনিতভাবে শেলা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৮ দিন পর সরকার এই রুট দিয়ে পুনরায় নৌচলাচলের অনুমতি দিয়ে আবারও হুমকিতে ফেলেছে সুন্দরবনকে।

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল দ্রুত চালু করার লক্ষে প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খনন কাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া উচিৎ। এর ফলে খনন কাজ দ্রুত হবে এবং অর্থের অপচয় বন্ধ হবে। এই চ্যানেল দ্রুত চালু হলে মংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে। সর্বোপরী সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের প্রতি সরকারের উদাসীনতায় আমরা মর্মাহত। এ দু:খজনক দুর্ঘটনার তিন দিন পর নৌমন্ত্রী ১২ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে জাহাজ থেকে তেল নিঃসরণের কারণে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না। দুর্ঘটনার পরে নৌবাহিনী কিংবা কোষ্ট গার্ডকে তেল অপোরণের কাজে নিয়োগ করা হলে ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা যেত বলে দাবি করেন তিনি।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল খনন কাজ শুরু করে বিআইডাব্লিউটিএ। এক কোটি ঘনমিটার মাটি কাটার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলেও প্রায় ৬ মাসে মাত্র ৭ লাখ ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সরেজমিনে আমরা দেখেছি, ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল খনন কাজ যেভাবে চলছে তাতে কখন কাজ শেষ হবে তা বলা প্রায় অসম্ভব। কিছু স্বার্থন্বেষী মহল খনন কাজকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য করছে। তেল চুরি, কাজ ফাঁকি দেওয়া একটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল ভর্তি ট্যাংকার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ট্রাজেডির ২৮ দিন পর বুধবার সকাল থেকে নৌযান চলাচল শুরু হলে নদীতে আটকে থাকা জাহাজ জট কমেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এই শ্যালা রুটের দু’পাশের নৌযানের সংখ্যা কমেছে বলে মংলা বন্দর কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তবে সব ধরনের অয়েল ট্যাংকার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মংলা শাখার সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী বলেন, নৌযান চলাচল করার জন্য অনুমতি দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। গত দু’দিনে সর্তক ভাবে সুন্দরবনে শ্যালা রুট দিয়ে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, মোড়েলগঞ্জ, বলেশ্বর ও শরনখোলা এলাকায় আটকে থাকা মালবাহী কার্গো ও লাইটারের জাহাজ মংলা বন্দর আসা-যাওয়ায় জাহাজ জট কমেছে। নৌচলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ০৮, ২০১৫)