শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : বাবু মিয়া (৪০) সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান গ্রামের ক্ষুদ্র তাঁত মালিক। যমুনা চরের সংগ্রামী এই মানুষটি পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে ৫ জোড়া তার নিজের তাঁতের শাড়ী মাথায় নিয়ে ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গতকাল বুধবার ভোরে শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটে এসেছেন।

সারাদেশে অবরোধ থাকায় গত দু’হাটে একখানা কাপড়ও বিক্রি করতে পারেনি বাবু মিয়া। পর পর দুটি হাটে বেচাবিক্রি না হওয়ায় তাকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়েছে। ঘরে কাপড় মজুত হয়েছে, কিন্তু হাতে নগদ অর্থ নেই। তাই বুধবার শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটে এসেছিলেন তিনি কাপড় বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাবেন আর বাকী টাকা দিয়ে সংসারের চাল, ডাল, নুন কিনে নিয়ে যাবেন। এমনিতেই পুঁজি সংকটের কারণে তাকে এখন ১০ খানা তাঁতের মধ্যে ৬ খানাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে । পাশাপাশি শ্রমিকও বাদ দিতে হয়েছে। স্কুল পড়ুয়া এক ছেলে এবং ছোট ভাইকে নিয়ে নিজেই ৪ খানা তাঁত এখন কোন রকমে চালু রেখেছে।

অবরোধের কারণে ক্রেতাশূন্য এদিন হাটের বেচা বিক্রি দেখে সে আরো হতাশ হয়ে পড়েছে। শুধু বাবু মিয়া নয় উল্লাপাড়া উপজেলার দাদপুর গ্রামের সরোয়ার মোল্লা, একই উপজেলার বালসাবাড়ী গ্রামের রজব আলী, বেলকুচি উপজেলার মোবারক হোসেন, শাহজাদপুর উপজেলার ডায়া গ্রামের সুরুজ্জামান মোল্লা ও গুধিবাড়ীর এরশাদ আলীর অবস্থা একই রকম। এসব তাঁত মালিকরা এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে। ছোট ছোট পুঁজির তাঁত মালিকরা এখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই পুঁজি হারিয়ে দিন মজুরে পরিনত হতে চলেছে।

শাহজাদপুরের ক্ষুদ্র তাঁত মালিক সমিতির সদস্য ওমর আলী জানান, শুধু ক্ষুদ্র তাঁত মালিকরাই নয় বড় বড় তাঁত ফ্যাক্টরির মালিকরাও এখন মহাজনের ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পরেছে। শাহজাদপুর কাপড়ের হাট উত্তরাঞ্চলের বস্ত্র শিল্প বিকাশের সিঁড়ি হয়ে দাড়িয়েছে। এ হাটে সপ্তাহের রবি ও বুধবার সারা দেশ থেকে ক্রেতার সমাগম ঘটে থাকে। তাই এ হাটকে কেন্দ্র করেই শুধু বস্ত্র শিল্পই নয় অন্যান্য উৎপাদিত পন্য বিক্রি হয়ে থাকে। তার মধ্যে রয়েছে সুতা, রং, তাঁত সামগ্রী পাওয়ারলুম যন্ত্রাংশ, ফলমুল ও হোটেল ব্যবসা। শাহজাদপুর হাটকে কেন্দ্র করে সপ্তাহের দুদিন শত কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে।

শাহজাদপুরের সুতা ব্যবসায়ী হায়দার আলী জানান, অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সুতার বাজারে। তিনি আরো জানান, যে সকল তাঁত মালিক শ্রমিকের মজুরি দিতে পারছে কেবল তাদের পক্ষেই তাঁত চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া হস্ত চালিত তাঁতের বাইরে যে সকল বিদ্যুৎ চালিত কাঠের তাঁত ও পাওয়ারলুম রয়েছে কাপড় বিক্রি না থাকায় মালিকদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। শাহজাদপুরের হাটকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর সদরে বিশেষায়িত ব্যাংক সহ ১৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। অবরোধ ও হরতালের প্রভাব এসকল ব্যাংক গুলোতেও পড়েছে।

(এআরপি/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৫)