মো. শামীম মিয়া : অনেক দিন আগের কথা। এক বনে হঠাৎ করেই শুরু হয় মুরগিদের এক বড় রোগ। এই রোগ যে মুরগিকে ধরে, তার বাঁচার আশা নাই বললেই চলে। এই রোগ হওয়াতে শিয়ালদের ভালোই হয়েছে। অসুস্থ মুরগিদের সহজেই ধরতে পারে।

কিন্তু সেদিন শিয়ালদের মোড়ল, বনের সব শিয়ালদের ডেকে বললো, শিয়াল বন্ধুরা, তোমরা মুরগিদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছো, এই সুযোগ কিন্তু ভালো ফল দিবেনা। কারণ, হাঁস-মুরগি আমাদের প্রধান খাদ্য। এই ভাবে ক্ষুধা লাগলে, না লাগলে মুরগিদের খেয়ে ফেলছো। একদিন না খেয়ে থাকতে হবে, বলে দিলাম। শিয়ালের মোড়ল আরো বললো, আমি শুনলাম তোমরা ছোট্ট বাচ্চাদেরও ক্ষমা করছো না। মোড়ল শিয়ালের কথা মনোযোগ সহকারে সব শিয়াল শুনছে, কেননা শিয়ালদের মোড়ল যা বলে অন্য শিয়ালরা তাই শোনে। মোড়ল শিয়াল আরো বললো, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।

আমি তোমাদের কাছে অনুরোধ করি, মুরগির ছোট্ট বাচ্চাদের, খেয়ো না, এই ছোট্ট মুরগিগুলোই আমাদের আগামী দিনের খাদ্য। এই কথা শুনে সব শিয়াল মাথা নাড়িয়ে বললো, ঠিক আছে মোড়ল সাহেব, আর কোনদিন এমন হবেনা। হঠাৎ খাদ্য হিসাবকারী শিয়াল বললো, মোড়ল সাহেব বনের মুরগি গুলো শেষের দিকে প্রায়। জানিনা আর কতদিন খেতে পারবো। তবে এই মিটিংটা যদি আরো আগে দেওয়া যেতো আরো ভালো হত। মোড়ল বললো, হয়তো আপনার কথা ঠিক, তবে যা হবার হয়ে গেছে, এখন বলে তো আর ফিরে আসবেনা। আমরা শিয়ালরা সবাই সাবধান হয়ে যায়। মিটিং শেষ হলে, তারা যার যার আস্তানায় গেলো।


এদিকে, রুলি একটা মুরগির নাম, তার আছে একটা পরিবার। রোগ এবং শিয়ালের অত্যাচারে সে চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। তারা মুরগি ছিলো অনেক কিন্তু নিষ্ঠুর শিয়ালগুলো অনেক মুরগি খেয়ে ফেলেছে। র্বতমানে ৫০ জন মুরগি আছে তার পরিবারে।
বেশ কয়দিন কেটে গেলো, বনে নেই একটিও মুরগি, শিয়াল গুলো অনাহারে আছে বেশ কয়দিন ধরে। তাই আজ আবারো এক জায়গায় হলো শিয়ালের মোড়লসহ শিয়ালরা সবাই। মোড়লকে সবাই বলচ্ছে মোড়ল সাহেব আমরা কি না খেয়ে মারা যাবো? মোড়ল শিয়াল বললো, আমরা মরবোনা, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুনিয়াতে যখন পাঠিয়েছেন তখন খাদ্যও দিবেন। এখন সাতটা বাজে আসুন টিভিতে খবর দেখি এবং শুনি, বর্তমানে বনের অবস্থা কী ? সব শিয়ালরা মোড়ল শিয়ালের সাথে গেলো টিভি দেখতে। খবরে শিয়ালগুলো দেখতে পেলো এবং শুনলো রুলির পরিবারে এখনো ৫০ জন মুরগি আছে। তারা বনের শেষ প্রান্তে, অন্য দেশে পাড়ি দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা নদী পার হতে পারছেনা। অনেকের সাহায্য সহযোগিতা চাচ্ছে তারা। যে কোন সময় পেতেও পারে। শিয়ালদের মোড়ল টিভি বন্ধ করে বললো, চলো আমরা রুলির পরিবারকে বুঝিয়ে আবার বনে ফিরে আনি ? ওরা যদি বনে থাকে আমাদের খাদ্যের কোন সমস্যা হবেনা। সবাই শিয়াল মোড়লের কথা শুনে, চললো বনের শেষ প্রান্তে। এদিকে মুরগি রুলি চিন্তা করছে, কী করা যায় ? তারা কি এই বিপদে কারো সাহায্য সহযোগিতা পাবেনা ?

হঠাৎ রুলি দেখতে পেলো একদল হাঁস যাচ্ছে কোথা যেন। রুলি চিৎকার দিয়ে ডাকছে, রুলির চিৎকার শুনে নদীর পাড়ে এলো হাঁসের দলবল। রুলি বললো, আমাদের বাঁচাও আমরা বড় বিপদে পড়েছি। হাঁসের রাজা বললো, আমরা তো আপনার কথা কিছু বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলেন তো ? রুলি হাঁসের রাজাকে সব বললো। হাঁসের রাজা বললো, ঠিক আছে, আমরা আপনাদের বিপদে সাহায্য করতে রাজি। এক মুরগি বললো, আপনাদের মত যদি সবাই সবার বিপদে আপদে, পাশে দাঁড়াতো তাহলে কত সুন্দর হতো তাইনা রাজা সাহেব ? হাঁসের রাজা বললো, ঠিক বলেছেন আপনি তবে কেউ তো কারো বিপদে পাশে দাঁড়ায় না। যাই হোক এখন ভাবেন কিভাবে আপনাদের নদীর ওপারে নিয়ে যাবো। এক হাঁস বললো, হুজুর বেয়াদবি মাফ করবেন, মুরগিরা আমাদের পিঠে চড়ে নদীর ওপারে যেতে পারে। হাঁসের রাজা বললো, ঠিকই বলেছেন, তাই করা হোক। মুরগিরা এখন হাঁসদের পিঠে চড়ে নদীর ওপারে এসে গেছে প্রায়, এমন সময় শিয়ালের দল আসে। শিয়ালরা মুরগিদের নদীর ওপারে যেতে দেখে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। মুরগি গুলো নদীর এপারে এসে আনন্দে নাচতে লাগলো।