রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হাত বাড়ালেই মিলে মরণ নেশা ইয়াবা। বিক্রেতারা জানান, তাঁরা এক-দেড় বছর ধরে গ্রামের নির্জন স্থানে জায়গা পরিবর্তন করে ইয়াবা বিক্রি করছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে গ্রামের রাস্তাগুলোতে এখন ফেরি করে ইয়াবা বিক্রি করা লোকেরা নেশাখোরদের সাপ্লাই দিতে পারছে না। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর-তরুণেরাও এ মরণ নেশায় ঝুঁকে পড়ছে। প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা না থাকায় গ্রামে ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা চলছে। এ কারণে সেবনকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রামের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ইয়াবা বিক্রি করেন। প্যান্ট বা শার্টের ভেতর রেখে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তা বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ, মালিবাড়ি, মোল্লারহাট, বাশঁতলা, নায়ারহাট, চরপাতা ইউপির পূর্ব চরপাতা, বোর্ডার বাজার, পশ্চিম চরপাতা, সিংহের পুল থেকে সুনামগঞ্জ সড়ক, সোনাপুর ইউপির বাসাবাড়ি, চরবগা, রাখালিয়া, বামনী ইউপির বাংলাবাজার, কবির হাট এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম্য সড়কে বিক্রি হচ্ছে ইয়াাবা। চরমোহনা, রায়পুর, উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে এর বিক্রি বেশি। এ ছাড়াা রায়পুর পৌরসভা বাসস্ট্যান্ড, মধুপুর, মুড়িহাটাসংলগ্ন আখড়া, মহিলা কলেজসংলগ্ন এলাকা, মুচিহাটা, পোস্ট অফিসসংলগ্ন ওয়াাপদা কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডে ওয়ার্কশপ এলাকা, নতুন বাজার, গোডাউনসংলগ্ন নদীর পাড়, পীর ফয়েজউল্যা, সড়কের ১০-১৫টি স্পটে এই মাদক ব্যবসা ও সেবন চলে। এছঅড়াও দক্ষিন কেরোয়ার দরগা খোলা নামক স্থানে পাইকারী দরে বিক্রি করে একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী চক্র। জেল খেটে আসা ইয়াবা শুকুর এ স্পটটির ক্যশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে। প্রশাসনের লোকদের দৃষ্টি রাখার জন্য ১২-১৫টি মোটর সাইকেল ও ৩০ জনের মত পাহারা দেয়ার দল রয়েছে এখানে।

সিংহের পুল থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, ১০-১৫টি মোটরসাইকেল এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলে থাকা লোকজন পথধচারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা শেষে আবার মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, এঁরা গ্রামের বাসিন্দা নন। সন্ধ্যা হলে এঁরা মোটরসাইকেলে ঘুরে ইয়াবা বিক্রি করেন। এ সময় এলাকায় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদেরও আনাগোনা বাড়ে।

এলাকার এক ইয়াবা বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুকুরের বড় ভাই সর্দার পদবীর ওই লোক থেকে কাছ থেকে তাঁরা পাইকারি দরে ইয়াবা কিনে আনেন। মুলত সর্দারের লোকজনই ইয়াবা বেচাকেনায় জড়িত।

থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী রায়পুর শহরের সর্দারবাড়ির বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০-২৫টি মামলা রয়েছে।

৭নং বামনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালেহ আহম্মদ ও চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, গ্রামের প্রত্যেকটি নির্জন সড়কেই ইয়াবা বিক্রি হয়। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি একাধিকবার উপস্থাপন করেও কোনো সুফল আসেনি।

কযয়েকজন ইয়াবা বিক্রেতা জানান, প্রশাসনের সংশ্লিটদের নিয়মিত মাসোহারা দিয় তাঁরা নির্বিগ্নে এ ব্যবসা চালাচ্ছেন। ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং অবোধের কারনে দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রশাসনিক হয়রাণীর ভয়ে তারা গ্রামের নির্জন জায়গায় মাদক বিক্রি করছেন।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মঞ্জুরুল হক আখন্দ বলেন, মুঠোফোনে ইয়াবা বিক্রির কারণে হাতে নাতে ধরা কষ্টকর। তবে এদের ধরতে পুলিশের টহল চলে। গত এক মাসে কমপক্ষে ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলে পুলিশ প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।

(পিকেআর/এএস/জানুয়ারি ১৫, ২০১৫)