শেরপুর প্রতিনিধি : কুষ্ঠ কোনো অভিশাপ নয়, এটি জীবানুঘটিত একটি সংক্রামক রোগ। চিকিৎসায় কুষ্ঠ রোগ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও হাসপাতালে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। কেবল প্রয়োজন সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি করা। কুষ্ঠ রোগের বিষয়ে এই সচেতনতা বাড়াতেই ২৫ জানুয়ারি রবিবার জাতীয় কুষ্ঠ দিবসে শেরপুরে এক সাংবাদিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে কুষ্ঠ সচেতনতা বাড়াতে জেলা হাসপাতাল থেকে একটি র‌্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেছে।

শেরপুর জেলা হাসপাতালের সভাকক্ষে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ার হোসেন এবং মূলবন্ধ উপস্থাপন করেন যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী খালেদুল ইসলাম খোকন। অনুষ্ঠানে জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা, ইউএইচএন্ডএফপিও ডা. সেলিম মাঠ সমন্বয়কারী শহীদুল ইসলাম, নিখিল চন্দ, প্রেসক্লাব সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা, দশকাহনীয়া সম্পাদক মো. আবুবকর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, শেরপুর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে কুষ্ঠ রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী উপজেলায় কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ সবচাইতে বেশি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেলায় ওই সময়ে কুষ্ঠ আক্রান্ত ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বিকলাঙ্গতার শিকার হয়েছে আরও অন্তত: ২০ জন। ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একই সময়ে ২১১ জন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত ও ৩৮৮ জন কুষ্ঠ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, ভারতে কুষ্ঠ রোগের প্রকোপ বেশী হওয়ার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীর হারও অনেক বেশি। শেরপুর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানেও সেই ঝুঁকি রয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘মাইক্রোব্যাকটেরিয়ান ল্যাপ্রি’ নামে এক ধরনের জীবানুর কারণে কুষ্ঠ রোগ হয়ে থাকে। কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এর জীবানু ছড়ায়। প্রাথমিক অবস্থায় কুষ্ঠ রোগ শনাক্ত করা গেলে বিকলাঙ্গতা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। চিকিৎসায় কুষ্ঠ সম্পুর্ণরূপে ভালো হয়। আর এর চিকিৎসা বিনামুল্যেই হয়। জেলায় বর্তমানে ১৯ জন কুষ্ঠ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তন্মধ্যে শেরপুর সদরে ৮ জন এবং শ্রীবরদীতে ৫ জন। তিনি বলেন, একটু সচেতন হলেই কুষ্ঠ শনাক্ত করা সম্ভব। দেখতে হবে শরীরে কোন দাগ এবং গুটি আছে কিনা। হালকা বাদামী, লাল, ফ্যাকাশে দাগ কিন্ত কোন চুলকানি হয়না কিংবা জ্বালাতন করেনা, তাকে কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখতে হবে। তাছাড়া শরীরে গুটি গুটির মতো দেখা গেলে কোন রকম জ্বালাতন কিংবা চুলকানি দেখা না গেলে কুষ্ঠ লক্ষণ হিসেবে ভাবতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৬ মাস থেকে এক বছরের চিকিৎসায় কুষ্ঠ ভালো হয়। আর ‘কমপ্লিকেশন’ থাকলে সারাজীবন ‘আন্ডার ট্রিটমেন্টে’ থাকতে হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসা না নিলে চোখে কুষ্ঠ হলে রোগী চোখের পাতা বন্ধ করতে পারেনা, হাতে হলে হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে যায়, পায়ে হলে পায়ের তলা অবশ হয়ে পা ঝুলে পড়া বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়।

ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী খালেকুল ইসলাম খোকন বলেন, কুষ্ঠ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া ছাড়াও তাদেরকে প্রয়োজন অনুসারে বিনামূল্যে বিশেষ ধরনের জুতা, সানগ্লাস, ক্র্যাচ, হ্ইুল চেয়ার দেওয়া হয়। এমনকি আমরা মুখের রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি কারেকশনের ব্যবস্থা করে থাকি। সরকারের পাশপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা একাজে সহায়তা দিয়ে আসছে।

(এইচবি/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০১৫)