আন্তজার্তিক ডেস্ক : দেবতা শিবের সেবায় নিজের জিব উৎসর্গ করেছে ভারতের এক কিশোর। শিবমন্দিরে বসে একটি ভোতা ব্লেড দিয়ে সে নিজের জিবটি কেটে একটি বাটিতে করে শিবের পায়ে উৎসর্গ করে।

১৭ বছর বয়সের লালমোহন সরেন। দুগদা জেলার বিখ্যাত মন্দির মহাদেবগ্রহা। সকালে প্রতিদিনের মতোই অসংখ্য ভক্ত পূজা করছিলেন। তখন মন্দিরের একপাশে বসে আপন মনে নিজের জিবটি কাটছিল। এ সময় এর মন্দিরের মেঝে রক্তে লাল হয়ে যায়।

দেবমূর্তির পায়ের কাছে রাখা একটি বাটিতে জিব আর একটি চিরকুট রাখে লালমোহন সরেন। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি ভগবান শিবের সেবায় আমার জিব উৎসর্গ করলাম। দয়া করে আমাকে মন্দির থেকে তাড়িয়ে দিও না, আমি সারাজীবন ভগবানের পায়ের কাছে বসে থাকতে চাই।

এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তারপর লালমোহনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার জিবটি জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের বাড়িতেই ফিরেছে লালমোহন।

ঝাড়খ-ের ওই অঞ্চলটি সাঁওতাল উপজাতিদের বাস। এরা নানা ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী। এছাড়া দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে তারা নানা ধরনের অদ্ভূত ধর্মীয় আচারাদি পালন করে থাকে।

লালমোহনকে এখন দেখভাল করছেন তার মা। কথাবার্তা বলতে পারছে না সে। হয়তোবা আর কোনদিনই মুখ ফুটে মনের ভাবাবেগ প্রকাশ করতে পারবে না। খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছে না ঠিকমত। কেবল তরল খাবার খাচ্ছে। তারপরও কোনো অনুশোচনা নেই তার। নিজের কাজে দারুন গর্বিত সে। যদিও এ ঘটনায় তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে ছেলের এ কা-টি একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন মা।

লালমোহনের মা লালমনি সরেন বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই ধর্মকর্মে আগ্রহী। সে প্রতিটি ধর্মীয় আচারাদি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করত। কিন্তু তাই বলে নিজের জিব কেটে শিবকে উৎসর্গ করবে তা কখনো ভাবিনি।

তিনি বলেন, আমি জানিনা ওর কি হবে! সে আর কোনো দিন কথা বলতে পারবে না। এখন তার ভবিষৎ কী হবে তা ঈশ্বরই জানেন।

চার সন্তানের জননী লালমনি সরেন বলেন, আমার ছেলে তার জিব দেবতাকে উৎসর্গ করেছে। এখন ঈশ্বরই তার সব ইচ্ছা পূরণ করবে এবং তাকে একটি সুন্দর জীবন দেবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ শর্মা বলেন, আদিবাসীরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং অদ্ভূত সব ধর্মীয় আচারাদি পালনে অভ্যস্ত। ২০১১ সালে এই একই মন্দিরে এক বালক তার দুটি আঙুল কেটে দেবতাকে উৎসর্গ করেছিল। এ ধরণের ঘটনা আমাদের এখানে নতুন নয়।

(ওএস/এটি/মে ০৮, ২০১৪)