শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ীর বুড়ি ভোগাই নদীতে মাটি ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। ফলে চলতি বোরো মওসুমে সেচ সংকটে পড়েছেন বুড়ি ভোগাইয়ের আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজারো কৃষক। এ সংকটে বাধ্য হয়ে নিজেদের বোরো ক্ষেত বাঁচাতে প্রায় দেড়শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে ভোগাই খননে নেমেছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, স্বাধীনতার পরপরই পাহাড়ি ঢল থেকে রেহাই পেতে ভোগাই নদীর শাখা বুড়ি ভোগাইয়ের মুখ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। পরে সময়ের স্রোতে বুড়ি ভোগাই ভরাট হয়ে পরিণত হয় আবাদী জমিতে। কিন্তু বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে কাবিখা’র টাকায় বুড়ি ভোগাই খননের কাজ শুরু করে সরকার। কয়েক দফায় কাবিখা’র বরাদ্দ দিয়ে ভোগাই নদীর কালাকুমা পয়েন্ট থেকে বরুয়াজানি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমটার নদী পূণঃখনন এবং জাইকার টাকায় কালাকুমা, পিঠাপুনি ও বরুয়াজানি এ ৩টি স্থানে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। এতে করে কৃষকদের হাজারো একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেচ সুবিধাবঞ্চিত ওইসব এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদে আশায় বুক বাঁধে। যথারীতি দুই বছর যাবত বুড়ি ভোগাই থেকে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদ করে আসছেন তারা।

কিন্তু গত দুই বছর যাবত দুই পাড়ের মাটি ভেঙে খননকৃত বুড়ি ভোগাইয়ের তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এতে চলতি মওসুমে ভোগাই নদীর কালাকুমা পয়েন্ট থেকে স্লুইচ গেইটের মাধ্যমে আসা পানি ভাটিতে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি বেশ কিছুদিন যাবত সরকারের প্রতিনিধিদের বলেও সুরাহা পায়নি কৃষকরা। একপর্যায়ে গত পনের দিনে বোরো মাঠের অবস্থা সেচের অভাবে শুকিয়ে কাঠ। ফলে বাধ্য হয়ে গত বুধবার থেকে কালাকুমা, তন্তর, মন্ডলিয়াপাড়া, বেলতৈল ও পিঠাপুনি গ্রামের দেড়শতাধিক কৃষক কোদাল নিয়ে নদী খননে নামেন। স্বেচ্ছাশ্রমে তারা নদী খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

৩০ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে বুড়ি ভোগাই পাড়ে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা কোদাল দিয়ে নদী খননে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসময় বেলতৈল গ্রামের কৃষক ক্দ্দুুস আলী (৭৮) জানান, ‘স্লুইচ গেইটের চুঙ্গির ভিতরে কোমড় পরিমাণ পানি, কিন্তু খাল এইহান দিয়া ভইরা গেছে। পানি কেমনে আইবো। এহন আমরা কৃষকরা নিজেবাজেই খুদবার (খনন করার) নামছি।’ তন্তর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম (৫৮) জানান, ‘চুঙ্গি ঠিকই আছে। ওটাত পানি আছে। খাল ভইরা গেছে। কৃষক ভাইটালে পানি পাইতেছে না। বোরো মরতাছে।’ পিঠাপুনি গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া (৮০) জানান, ‘খেতখলা যা আছে সব ফাইট্টা অকাজে যাইতাছে। মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে পইরা গেছে। এই কারণে আমরা অহন এই খালের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পইরা খনন করতাছি।’ মন্ডলিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম (৬৫) জানান, ‘আমাদের যে জমি লাইগাইছি এই জমি মারা যাইতাছে পানি বেগর (পানি ছাড়া)। না পাইয়া এহন আমরা নিরূপায় অইয়া নিজেরাই খাল খুইদ্দা জমি বাঁচাইবার জন্য চেষ্টা করতাছি।’

(এইচবি/এএস/জানুয়ারি ৩০, ২০১৫)