মনোজ হালদার : অন্যায় ও নিপীড়ন হলে আন্দোলন হবে এটা স্বাভাবিক। আর দেশটি গণতান্ত্রিক  হলে তার প্রতিটি নাগরিককে সাংবিধানিকভাবে এ অধিকার দেওয়া থাকে। গণতন্ত্রের উন্নতির লক্ষ্যেও আন্দোলন-সংগ্রাম হয় বলেই এগিয়ে যায় দেশ ও জাতি। তবে প্রতিটি সফল আন্দোলনের নেতৃত্বকে পরিমিত বোধের পরিচয় দিতে দেখা গেছে। আন্দোলনে সহিংসতা দেখা দিলে সেটি থামানোর রীতিও আছে সভ্য সমাজে।  উল্লেখ্য, সহিংসতা সৃষ্টি হলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন এর নেতৃত্বদানকারী মহাত্মা গান্ধী। অসহযোগ, হরতাল ও অবরোধের মতো আন্দোলন যাদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তারা প্রত্যেকেই অহিংসতার কথা বলেছেন। এমনকি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামেও আমরা পাকিস্তানি সেনাদের আগে আক্রমণ করিনি, আক্রমণের জবাব দিয়েছিলাম। তাই এসব সংগ্রাম জনমুখী হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাসীরও সমর্থন আদায় করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত আমাদেরই বিজয় হয়েছিল।

এদিকে বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সাধারণ মানুষকে নামতে দেখা যাচ্ছে না। নেই হাজারহাজার মানুষের মিছিল। শুধু চোরাগোপ্তা হামলা করে সাধারণ মানুষকে, এই দেশের জনগণকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। তাহলে এটি কীসের উত্তরণের জন্য সে প্রশ্ন অনেকেরই। জনকল্যাণের আন্দোলন হলে জনগণকে মেরে ও পুড়িয়ে কীভাবে আন্দোলন হয় সেটা বোধগম্য নয়। নিরীহ জনগণকে পুড়িয়ে মারার আন্দোলন কী তবে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াল না? এতদূর নাই গেলাম, এ আন্দোলন যে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ারই সেটা পরিষ্কার। দেশ ও গণতন্ত্রের উন্নয়নের কোনো লক্ষ্য এখানে আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

বিরোধীরা যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের কথা বলছে সেটির দাবিও দুর্বল করে দেয় বর্তমান আন্দোলনের ধরণ। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলেও ভবিষ্যতে সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষ্যণ নেই। এর আগে তারা যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন বিরোধী জোটকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সারা দেশে বোমাবাজি ও জঙ্গি উল্থান হয়। ক্ষমতায় গিয়ে তারা জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অস্বীকার করেছিল। এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরই বা কী হবে। এসব নানা অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকার আরেকটি মধ্যবর্তী নির্বাচন কীভাবেই দিতে পারে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

তাই হিংসাত্মক আন্দোলন বাদ দিয়ে আগে বিরোধী জোটকে আলোচনায় বসে অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা করতে হবে। এর সুরাহা না হলে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা হিসেবেই দেখবে। তাই এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় কি?

(এমএইচ/অ/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫)