চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানীর দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া বরখাস্তকৃত কম্পিউটার শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে নিশানকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক যোগদান করানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন চাটমোহরবাসী।

সৃষ্টি হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত এক অভিভাবক সদস্য রবিবার পদত্যাগ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন এলাকাবাসী।

সচেতন ছাত্র সমাজের ব্যানারে শিক্ষক নিশানকে পুনর্বহালের প্রতিবাদে সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টার মোড়ে প্রতিবাদ সভা করে। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন, পার্শ্বডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রবিউল করিম তারেক, ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আ. ওয়াহিদ বকুল, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম তাইজুল, সাধারণ সম্পাদক তানভীর জুয়েল লিখন, পারভেজ আহমেদ, সাগর প্রমুখ।


জানা গেছে, শিক্ষক নিশানকে যোগদান করাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শারমিন ফেরদৌস চৌধুরী প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৮/০১/১৫ ইং তারিখে তাঁর দপ্তরের ৪০/পাবঃ(৫) নং স্মারক পত্রে বলা হয়েছে, পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলাধীন চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. আশরাফুল ইসলাম (ইনডেক্স নং ৫৬৮১৩২) কে স্বপদে পুনর্বহালের জন্য ইতোপূর্বে নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু মহাপরিচালকের নির্দেশ অমান্য করে তাকে স্বপদে বহাল করা হয়নি। এ অবস্থায় পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে পত্রের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপ-পরিচালককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকেও পত্রের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এই পত্র পাওয়ার পর ম্যানেজিং কমিটি শনিবার সভা করেছে। নিশানকে যোগদান করাতে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্য শিক্ষক নিশানকে যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছেন। বিষয়টি উপ-পরিচালককে অবহিত করতে কমিটির সভাপতি রবিবার রাজশাহীতে যান।

এদিকে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য সাংবাদিক কে এম বেলাল হোসেন স্বপন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, এই বিদ্যালয়টির ভবিষ্যত রাজনৈতিক চোরাবালিতে আটকে গেছে, ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দায়েরকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক শিক্ষক নিশানকে দোষী সাব্যস্ত করে চাকুরি থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে বিদ্যালয়ের চলমান কমিটি তাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ এই সিদ্ধান্ত বিদ্যালয়ের স্বার্থ বিরোধী, বিতর্কিত দাবি করে তার প্রতিবাদে ম্যানেজিং কমিটির ওই সদস্য পদত্যাগ করেন।

সভায় যৌন হয়রানীর অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক নিশানকে পুনর্বহালের নিন্দা জানিয়ে তাকে পুনর্বহাল না করার দাবি জানান। শিক্ষক নিশানের যোগদানের বিষয়ে চাটমোহরে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো বলেন, ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য পদত্যাগ করেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠি স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাক, তা চাইছেন। নিশানকে যোগদান করানো না হলে স্কুলের এমপিও বাতিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিবেকবান সবাইকে বিষয়টি বুঝতে হবে। শর্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষককে যোগদান করানো যায় কিনা, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।

প্রসঙ্গতঃ স্কুলের ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম নিশানকে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর শিক্ষক নিশান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করা ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষক নিশানকে যোগদান করাতে কয়েকবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা না করানোর ফলে দু’দফা ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এবার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

(এসএইচএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫)