বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার ধুনটে পিঁড়িতে ভর করে আতিকুল ইসলাম জনি (১৭) নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থী এসএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

শুক্রবার সকালে কাঠের তৈরি পিঁড়িতে ২ হাতে ভর করে ধুনট ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের কক্ষে পৌঁছায় সে। পরীক্ষা শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে একইভাবে কেন্দ্রে থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আতিকুল ইসলাম জনির বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামে। এক বছর আগে বিনা চিকিৎসায় বাবা মোখলেসুর রহমান মারা গেছেন। মা কাজুলী বেগম পরের বাড়িতে কাজ করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে জনি ছোট। অভাব অনটনের সংসার।

সহায় সম্ভব বলতে মাথা গোজার ঠাঁই চার শতক বসতভিটা। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উপজেলার গোসাইবাড়ি আব্দুল ওয়াদুদ কারিগরি স্কুল থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

কাঠের তৈরি ২টি পিঁড়িতে ভর করে সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে বের হয় জনি। পরীক্ষা (বাংলা বিষয়) কেমন হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে ভিতু স্বভাবের জনি নিরুত্তুর থাকে। তার দৃষ্টি তখন বিশাল খোলা আকাশের দিকে। স্থির তার চোখের পাতা। পড়ালেখা শিখে কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে জনির জবাব, আদর্শ শিক্ষক হবো।

আতিকুল ইসলাম জনির মা কাজুলী বেগম জানান, জন্মের পর ছোট আকারের দুই পা নাড়াতে পারেনি জনি। শরীরের সঙ্গে দুইটি পায়ের বাঁকা পাতা ঝুলছে। অন্যদের মতো জনি চলতে পারে না। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

তিনি আরো জানান, পাড়ার সমবয়সী অন্যসব শিশুরা যখন দল বেঁধে প্রতিদিন স্কুলে যায়। তখন শিশু জনির সে দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। পড়াশোনার সুপ্ত বাসনা তখন থেকেই তার ভেতরে প্রবল হয়ে ওঠে।

পাড়ার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরে। জনির এমন কথা শুনে বাবা-মার মনে কষ্ট হয়। কারণ ছেলের বিদ্যালয়ে যাওয়ার সামর্থ নেই। তারপরও ছেলের অদম্য ইচ্ছায় বাড়ির পাশে শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

এরপর থেকে শুরু হয় মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যাওয়া। তবে জনির মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে যেতে পারে না। দৌঁড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্যসব সহপাঠী কিংবা গ্রামের প্রতিবেশি ছেলেরা যখন মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে!

এভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০১১ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩৯ পেয়ে কৃতকার্য হন। এরপর অভাবের কারণে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। দুই বছর পর আবারো ভর্তি হন গোসাইবাড়ি আব্দুল ওয়াদুদ কারিগরি স্কুলে।

ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান জুবায়ের আহম্মেদ জানান, এই প্রতিষ্ঠানে তাকে বিনা বেতনে লেখাপড়া করানো হয়েছে। তার কাছ থেকে পরীক্ষার ফি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এমনকি তার বই-খাতা থেকে শুরু করে যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়েছে।

(এএসবি/এটিআর/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫)