কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : হাঁস-মুরগীর ডিম, কুড়িয়ে পাওয়া ধান, কলাই শাক বিক্রি করে প্রায় তিন বছর চেষ্টার পর ছোট একটি টিনের ঘর তুলেছিলেন বিধবা সালেহা বেগম (৭০)। তেইশ বছর আগে স্বামীর দেয়া শেষ স্মৃতিচিহ্ন স্বর্নের নাক ফুল, কানের দুল ও কিছু জমানো টাকাও ট্রাঙ্কে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই ঘর কুপিয়ে তছনছ করে ঘরে থাকা শেষ সম্বলটুকুও লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। শেষ স্মৃতি হারিয়ে এখন সে পাগল প্রায়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের এ সালেহা বেগমের মতো আরও ছয়টি পরিবার এখন স্বর্বস্বহারা। এমনকি তাদের ভাত রান্নার পাতিল,কড়াই,পানির কলস ও লবনের বাটিটাও টুকরো টুকরো করে ফেলেছে।

জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সালিশ বৈঠকে হামলা করে জাহিদুল ইসলাম,নুর মোহাম্মদ প্যাদা ও রাজিবের নেতৃত্বে ৪০/৪৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোটা মধুখালী গ্রামে তান্ডব চালায়। কুপিয়ে তছনছ, ভাংচুর ও লুটপাট করে রফিকুল ইসলাম প্যাদা, লালু প্যাদা, রাজ্জাক প্যাদা, ইব্রাহিম প্যাদা ও বাবুল প্যাদার ঘরের মালামাল। তাদের সশস্ত্র হামলায় আহত হয় অন্তত ২০ জন। গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা থেকে বাঁচতে উল্টো নিজেদের বসতঘর কুপিয়ে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে নুর মোহাম্মদ প্যাদার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম। এ মামলার কারনে গ্রেফতার আতংকে এখন এলাকাছাড়া গ্রামবাসী।
সোমবার সকালে হয়রানীমূলক মামলা থেকে বাঁচতে ও গ্রামবাসীদের উপর হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে শতশত গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলন করেছে। মধুখালী গ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ্য রাজ্জাক প্যাদার বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম কিশোর বলেন, গ্রামবাসীদের উপর হামলা করে উল্টো ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় গোটা গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও পুলিশের ভয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারগুলো নিজেদের ঘরগুলো ঠিক করতে পারছেন না। কিশোর বলেন, মাষ্টার্স পাশ করে গ্রামে পৈত্রিক সম্পতিতে চাষাবাদ ও গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন গত দু’বছর ধরে। অথচ তাকে (কিশোর) সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান করে উল্টো গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে নুরু প্যাদা। এ সময় উপস্থিত এলাকার শতশত মানুষ বলেন, কিশোর অসহায় মানুষের পাশে থাকে তাই তাকে হয়রানী করার জন্য সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা করছে।
জেলে রফিকুল প্যাদা বলেন, ধার দেনা কইর‌্যা একটা ঘর তোল ছেলাম। জাহিদুল ও রাজিবের সন্ত্রাসী বাহিনী ঘরডা কোপাইয়া ফালাফালা কইর‌্যা দেছে। ভয়ে মোর বউ (আতরজান বিবি) ছোট্র পোলাডা লইয়া বাপের বাড়ি চইল্লা গ্যাছে। এ্যাহন মুই থাহি পুলিশের ভয়ে পলাইয়া পলাইয়া। সত্তোরোর্ধ বেলোয়া খাতুন বলেন, মোর ঘরে কিচ্ছু নাই। কোপাইয়া সব শ্যাষ কইর‌্যা দেছে। পানি খাওয়ার গেলাসটা পর্যন্ত নাই। মোর নাতি ও পুত্রের বউরেও মারছে। ভয়তে মোরা পুহইর (পুকুর) পাড়ে পলাইয়া যাইয়া জানডা বাছাইছি।
আওয়ামীলীগ নেতা আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান, তারা সময় মতো না আইলে গোটা গ্রামই সন্ত্রাসীরা জ্বালাইয়া দিতো। তাদের কাছ থেকে পেট্রোলের বোতল কেড়ে নিলেও ঘর বাড়ি রক্ষা করতে পারিনি। সেনা সদস্য জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বালিয়াতলী থেকে ৪০/৪৫ আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এ তান্ডব চালায়।
একাধিক গ্রামবাসী জানান, তারাও মামলা করেছেন। কিন্তু মূল আসামী গ্রেফতার হয়নি। অথচ নুরু প্যাদার বউ মিথ্যা মামলায় উল্লেখ করেছেন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত তাদের ঘরে হামলা হয়েছে। অথচ ওই সময় এলাকায় পুলিশ ছিলো। পুলিশই আহত গ্রামবাসীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তাহলে হামলা হলো কিভাবে ? সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ এ ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের দাবি কোন নিরাপরাধ গ্রামবাসী যেন ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়।
(এমআর/পিবি/ফেব্রুয়ারি ৯,২০১৫)