স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : পাকিস্তানের ইনিংসেরর  ৩৫তম ওভার করার জন্যে মোহাম্মদ শামীর হাতে বল তুলে দিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। শামীও প্রথম বলে এনে দিলেন ব্রেক থ্রু।  শামীর লো ফুল টস ডেলিভারিটা কাভারের উপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু বিরাট কোহলি পেছনে দৌড়ে গিয়ে লুফে নিলেন অসাধারণ ক্যাচ। আর তখনই ভারতীয় শিবিরে শুরু হয়ে গেলে ম্যাচ জয়ের উৎসব।

শেষ ষোল ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৫১ রান। টি-টোয়েন্টির এই মারকাটারি যুগে খুব অসম্ভব কোন লক্ষ্য নয় তা। আর কে না জানে আফ্রিদি জ্বলে উঠলে যে কোনো দলের ম্যাচ জয়ের আশাও শেষ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ২২ রান করে আফ্রিদি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন পাকিস্তানের স্কোর ছয় উইকেটে ১৪৯ রান।

আর তখনই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ষষ্ঠ জয় পাওয়াটা ছিল ভারতের জন্যে সময়ের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত অ্যাডিলেইডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৭৬ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

অ্যাডিলেইডে টসে জিতে ব্যাটিং নেন ভারতের অধিনায়ক। প্রথমে ব্যাট করে সাত উইকেটে ৩০০ রান স্কোর বোর্ডে জমা করে ভারত। কিন্তু ৩০১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভারে ২২৪ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

শুরুতেই অস্বস্থিতে ভারত
ব্যাটিং সহায়ক পিচে বেশ ধীরে সুস্থে শুরু খেলতে শুরু করেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার শিখ্র ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মা। কিন্তু ইনিংসের অষ্টম ওভারে পাকিস্তানকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সোহাইল খান। রোহিত শর্মা সোহাইলের বলে মিসবাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তখন ভারতের রান ৩৪।

বিরাট কোহলি এবং শিখর ধাওয়ানের পার্টনারশিপ
বিরাট কোহলই এবং শিখর ধাওয়ান ১৩৪ বলে ১২৯ রানের পার্টনারশিপ ভারতকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। দুই ব্যাটসম্যানেরই সাবলীলভাবে ব্যাটিং মিসবাহর জন্যে দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে শিখর ধাওয়ান ৭৩ রান করে রান আউট হলে ১৬৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।

সেঞ্চুরি করে আউট হলেন বিরাট থমকে গেল রানের চাকা
বিরাট কোহলি এবং সুরেশ রায়না তৃতীয় উইকেটে ১১০ রান যোগ করলে মনে হচ্ছিল ভারতের স্কোর ৩৩০ কিংবা ৩৪০ ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু ক্যারিয়ারে ২২তম সেঞ্চুরি করার পর সোহাইল খানের বলে উমর আকমলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলয়নে ফিরে গেলে থমকে যায় ভারতের রানের চাকা। বিরাট কোহলি করেন ১০৭ রান।

সোহাইল খানের দারুন স্পেল
পাকিস্তানের পেসার সোহাইল খান দারুন বোলিংয়ের ফলে শেষ পাঁচ ওভারে ২৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি ভারত। সোহাইল শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ধোনি এবং রাহানের উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সোহাইল খান ৫৫ রানে নেন পাঁচ উইকেট।

৩০০ রান ছিল না নিরাপদ
বোলিং অ্যাটাকের দুর্বলতার কারণেই ৩০০ রান করার পরও দুঃশ্চিন্তায় ছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজম্যান্ট।

শুরুতেই ধাক্কা খেল পাকিস্তান
রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ১১ রানে মেইক শিফট ওপেনার ইউনিস খানের উইকেট হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান।

আশা জাগিয়েছিল আহমেদ শেহজাদ এবং হারিস সোহল
দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রান যোগ করেই আহমেদ শেহজাদ এবং হারিস সোহেল ভারতের অধিনায়কের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দুই ব্যাটসম্যানের কাছেই পাত্তা পাচ্ছিল না ভারতের বোলাররা। তবে দলীয় ৭৯ রানে সোহেলেকে স্লিপে দাঁড়ানো রায়নার ক্যাচ বানিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন রবিচন্দ্রন আশ্বিন।

রবীন্দ্র জাদেজা ও উমেশ যাদব ধসিয়ে দিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং
এক রানের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং ধসিয়ে দেন উমেশ যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেহা। উমেশ ২৩তম ওভারের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ বলে আহমেদ শেহজাদ এবং শোয়েব মাকসুদের উইকেট তুলে নিলে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় চার উইকেটে ১০২ রান। এরপর জাদেজা ২৫তম ওভারের চতুর্থ বলে উমর আকমলের উইকেট তুলে নিলে ১০৩ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান।

মিসবাহর লড়াই
পাকিস্তানের হয়ে একাই লড়াই করেছেন মিসবাহ উল হক। মোহাম্মদ শামীর বলে আউট হওয়ার আগে ৮৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।

বিশ্বকাপে ভারতের কাছে পাকিস্তানের হারের ইতিহাস পাল্টাতে পারলেন না মিসবাহ বাহিনী। এ পর্যন্ত ৬বারের দেখায় সবকটাতেই হেরেছে পাকিস্তান।


(ওএস/পি/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫)