কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : বিশাল বিশাল গাছ কেটে গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে সদ্য কাটা গাছের আলামত নষ্ট করে উজাড় করা হচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। রাতের আঁধারে এভাবে গাছ কেটে শতশত গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সাগর ঘেষা ছইলা-কেওড়া এ বনাঞ্চলের মরা ও জীবিত সব ধরনের গাছ কাটা হলেও বন বিভাগ কিছুই জানে না বলে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

কলাপাড়ার কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন ইকোট্যুরিজমের আওতায় ইকোপার্ক থেকে গঙ্গামতি বনাঞ্চল থেকে এভাবে প্রতিনিয়ত গাছ কাটা হচ্ছে। সরেজমিনে বনাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। গত বর্ষা মেীসুসে সাগরের জলোচ্ছাসের ভাঙ্গনে ভেঙ্গে পড়া গাছগুলোই বেশি কাটা হচ্ছে। সাগর পাড়ে পড়ে থাকা গাছ উজাড়ের পর এখন গঙ্গামতি বনাঞ্চল ও ইকোপার্কের ছইলা, কেওড়া ও ঝাউ গাছ কাটা শুরু হয়েছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বাবলা ও কড়ই গাছ রোপন করে গঙ্গামতি বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হলেও আশির দশকে প্রাকৃতিকভাবে এ বনাঞ্চলে ছইলা , কেওড়া ও বাইনগাছ জন্মনেয়। প্রায় আট কিলোমিটার এ বনাঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ সাগরের ভাঙ্গনে বিলীন হলেও এখন উজাড় করছে বনদস্যুরা। গঙ্গামতি বনাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, শতশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাতের আঁধারে ওই কাটা গাছ কেরোসিন বা পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে সদ্যকাটা গাছের আলামত নষ্ট করে দিচ্ছে বনদস্যুরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিকেল হলেই শুরু হয় গাছ কাটা। কেননা এ বনাঞ্চলে বনকর্মীরা নিয়মিত পাহারা না দেয়ায় গভীর রাত পর্যন্ত গাছ কেটে স্থানীয় মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকায় করে তা পাচার করে দিচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনই বাগানের মরা গাছের ডাল কেটে তা স্থানীয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও বন কর্মকর্তারা এ গাছ কাটায় জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।

জানা যায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সরকার এ বনাঞ্চল রক্ষায় সাগর ঘেষে প্রায় ৩২ হেক্টর জমিতে নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টির উদ্যেগ নেয়। এ বনাঞ্চলে ঝাউ, আকাশমনি গাছ ছাড়াও পাঁচ হেক্টর জমিতে মাউন্ড বাগান (স্থানীয় ভাষায় দ্রুত বর্ধনশীল ন্যাদা গাছ) রোপন করা হয়। সরকার একদিকে পরিবেশ রক্ষায় বাগান করলেও এই বনাঞ্চলের মূলগাছগুলোই এখন প্রকাশ্যেই উজাড় হচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী জানান, রাতের আঁধারে প্রতিদিনই বনের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখেন। যদি ভুলে গোটা বাগানে আগুন লেগে যায় তাহলে এ বনাঞ্চল পুড়ে ছাঁই হতে সময় লাগবে না। তারা ভয়ে রাতে বের হতেও পারেন না।

গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ রাতের আঁধারে কিছু গাছ কাটার কথা স্বীকার করে জানান, জনবল সংকটের কারনে বিশাল এ বাগান মাত্র ছয়জন প্রহরীর পক্ষে পাহারা দেয়া অসম্ভব। তারা জানান, সাগরের মাছ ধরারত জেলেরাই এ গাছ কাটায় তাদের সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি এ গাছ কাটার ঘটনায় ইতিমধ্যে চারটি মামলা করেছেন বলে জানান।

মহীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন জানান, তিনি কলাপাড়ায় নতুন এসেছেন। যদি কেউ গাছ কাটে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বাগান থেকে গাছ কেটে গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে আলামত নষ্ট করার কথা তিনি জানেন না।

(এমকেআর/এএস/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫)