অরবিন্দ পাল অখিল : পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে জাতি, পুড়ছে দেশ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতি আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে কি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে মানুষ দিন পার করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোন না কোন স্থনে যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, এতে দেশের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে যানবাহন পুড়ছে, পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানুষের কপাল। হাসপাতালগুলোতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। মৃত্যুর মিছিল হচ্ছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। কিন্তু জনগণের এ আহাজারি আমাদের রাজনীতিবিদদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। অপেক্ষাকৃত শান্ত জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে পেট্রোলের বিধ্বংসী থাবার আগ্রাসন বাড়ছে। আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করা হচ্ছে সভ্যতা, কৃষ্টি আর ঐতিহ্যকে। মফস্বল শহরগুলোতে একটি রাজনৈতিক বিরোধীতা থাকলেও, সাংস্কৃতিক ঐক্যের ঐতিহ্য রয়েছে।

তা সত্ত্বেও গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের ফুলপুর, গৌরীপুরে পেট্রোলবোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে আবারও যানবাহন ও মানুষ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর চেষ্টা চলছে।

রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলটি জোনাল হরতাল কর্মসূচী দিয়ে আমাদের ধারণাকে স্পষ্ট করছে তারা পরিকল্পিতভাবেই দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, যার অনেকটাই সফল হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার হরতাল আর কর্মীবিহীন অবরোধের কর্মসূচী সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিকদের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ৩৮ দিন হরতাল অবরোধ চলল ব্ল্যাক হোয়াইট কর্মসূচীর মত আইডিয়াটা মন্দ না বটে কিন্তু আতংক ছড়ানো ছাড়া কোন কোথাও হরতাল-অবরোধের ছিটেফোটাও হচ্ছে না। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মাস্টার প্লান অনুযায়ী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। যেমনটি বিএনপি জামায়াত সরকারের আমলে বোমা হামলা করা হয়েছিল ৬০ টিরও বেশি জেলায় একই দিনে একই সময়ে।

আসলে জনগণের বন্ধু কেউ নেই। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলেন। তিনি আর্তের চিৎকারে কেঁদেছেন। তার কান্না দেখে সারাদেশের মানুষ কেঁদেছে। যিনি ওই ইউনিটে যাবেন তাকে কাঁদতে হবেই। যদি সে মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় সেইসব মানুষ এবং তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনার বিষয়টি আলাদা হবেই। বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে এবং সহিংস ও নাশকতা নির্ভর রাজনীতি এস্টাবলিস্ট করার চেষ্টা চলছে তারা বিদেশ নির্ভর হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা স্বাধীন জাতি হিসেবে অপমানজনক। বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন। আন্তজার্তিকভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন দেশে পলিটিকেল ক্রাইসিস চলছে।

ড. মঈন খান ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাহায্য সমর্থন পেতে কত চেষ্টাই না করে যাচ্ছেন। শেষতক জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মহোদয় বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। এটাই বিএনপির বড় সফলতা।

সারাদেশে পরিকল্পিত মানুষ আর যানবাহন পুড়িয়ে জনগণকে আতংকগ্রস্ত করে কোমলমতি পরীক্ষার্থিদের জিম্মি করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় একটি জাতির জন্য ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে না।

ইদানীং বিএনপি নেতারা এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে উল্টো সরকারের উপর তারা দোষ চাপাচ্ছেন। এটা আরও দৃঢ় হত যদি বিএনপি জামায়াত তাদের নেতাকর্মীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে পেট্রোলবোমাবাজদের ধরিয়ে দিত। কেন সড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার বাহিনীর সাথে তাদের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে না সেটাই চিন্তার বিষয়। এটা তারা করছে না কারণ দোষীদের ধরতে গিয়ে বিএনপি নিজেই ফেঁসে যেতে পারে।

তারা আজকেই যদি তাদের সুনাম বিনষ্টকারী সরকারি এজেন্টদের পেট্রোলবোমা ককটেলসহ ধরিয়ে দিতে পারে তাহলে সরকারের অপচেষ্টা এবং জারিজুরি জনগণের সামনে পরিষ্কার হয়ে যেতো। শুধু তাই নয় এসব সহিংসতা প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জনতার কাতারে মিশে যেতে পারে। এতে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না। এ রকম ঘটনা ঘটলে সারাদেশের বিবেকবান মানুষ তাদের পক্ষাবলম্বন করবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ সুযোগটা তারা নিতেই পারে। তাদের এখন বাংলাদেশের মানুষের উপর ভরসা নেই। কিন্তু তারা ভরসা করে ষড়যন্ত্রের উপর ভরসা করে বিদেশীদের উপর। রাজনীতি এখন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সন্ত্রাসের নির্ভর।

প্রধানমন্ত্রী অগ্নিদগ্ধ আর্তদের দেখতে বার্ন ইউনিটে গেছেন, সহানুভূতি জানিয়ে আবেগে কেঁদেছেন। দগ্ধ আধ মরা মানুষগুলো ও তাদের স্বজনেরা এটাও তো প্রত্যাশা করতে পারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেন তাদের দেখতে যান তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। আর্তের কান্নার শব্দ তারও শোনা জরুরী। এছাড়া দেশ শান্ত হবে না। আমাদের দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা রাজনীতির সুবিধা অসুবিধা ভুলে যদি আমরা দগ্ধ আর নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াই এ বিপর্যয় রোধ হবে। যেমন আমরা মোকাবেলা করি বন্যা, সিডর আর জলোচ্ছ্বাসের পর রানা প্লাজা আর জগন্নাথ হলের ধ্বংসের বেলায়। বাংলাদেশের মানুষ আরও বড় বিপর্যয় মোকাবেলা করেছে। বর্তমান সন্ত্রাসী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করে এ জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াবেই। ইতিহাস তো আমাদের এমনই জানান দেয়।