শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার দক্ষিন ডুবলদিয়া গ্রামে খননযন্ত্র দিয়ে ফসলীজমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন জাজিরা উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন কাজী (৫০)। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খনন যন্ত্রদিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে আশেপাশে মানুষের ফসলী জমি ভেঙ্গে পরছে। খনন কাজে বাধা দিয়ে ও কোন ফল পাচ্ছেনা কৃষকরা। থানায় অভিযোগ করারর পরেও প্রশাসন বিষয়টিকে আমলে নেয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সুত্র জানায়, ২০০৮ সালে জাজিরা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন ডুবলদিয়া গ্রামে ২ বিঘা ফসলী জমিন ক্রয় করে জাজিরা উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন কাজী (৫০) ও স্থানীয় মোবারক মোল্যা। সেই জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে তারা। জমিটি একটু গভীর হওয়ার পরে খননযন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) বসিয়ে সেখান থেকে বালু বিক্রি করতে শুরু করেন। এভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার ফলে প্রকান্ড এক দিঘীর মত হয়ে যায় ওই জমিগুলো। আসে পাশের মানুষের আরো ২/৩ বিঘা ফসলী জমি ভেঙ্গে পরতে শুরু করে দিঘীতে। পরে কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে নাম মাত্র মূল্যে জমি গুলো কিনে নেয় তারা। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হওয়ার কারনে মানুষের জমি হাতিয়ে নিয়েছে নুর হোসেন কাজী গং। এই ভূমি দস্যুরা আবার নতুন করে সম্প্রতি ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কাটা শুরু করে। জমির মালিক এ্যাডভোকেট ইশতিয়াক আহমেদ, আমির হোসেন বেপারী, মজিবুর রহমান শেখ, আইউব আলী চৌকিদার, আব্দুর রব কাজী, আবুল হোসেন বেপারী, বাদশা কাজীসহ এলাকার অনেক মানুষের আরো প্রায় ৫ বিঘা ফসলী জমি ভেঙ্গে পরেছে। এবছর তারা জমিগুলোতে ধনিয়া, কালোজিরা, মশুর, গম সহ বিভিন্ন ধরনের রবি শস্য আবাদ করেছিল। ভেঙ্গেপড়া জমির মালিকদের জমির মূল্য ও ক্ষতিপুরন পরিশোধ না করেই মাটি কেটে বিক্রি এই প্রভাবশালী গং। ভাঙ্গন হুমকিতে পরেছে পুকুরটির চার পাশের আরো অন্তত ৩০বিঘা ফসলী জমি।
এলাকাবাসী নুর হোসেন কাজীর হাত থেকে তাদের জমি রক্ষার দাবিতে শনিবার জাজিরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগের কথা শুনে নুর হোসেন তার নিজস্ব বাহিনী নিয়ে রবিবার সকাল থেকেই অভিযোগকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রহরা বসিয়েছে তাদের ধরে বিচার করার জন্য।
এলাকাবাসী জানান, নুর হোসেন কাজী সব সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে রাখে। তিনি মানুষের ফসলী জমি দখল করা ছারাও বসতভিটা দখল করা শুর করেছে। গত ডিসেম্বরে একই গ্রামের আব্দুল হক আকন নামে এক ব্যাক্তির বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর করে জোরপুর্বক দখল করে নিয়েছে। অন্যায় ভাবে বাড়ি ঘর দখলের অভিযোগ এনে আব্দুল হক আকনের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদি হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর নুরহোসেন কাজীর বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা করেও কোন ফল পাচ্ছেনা পরিবারটি।
আবদুল হক আকনের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. ইমরান হোসেন বলেন, নুর হোসেন কাজী আমার মা বাবাকে অত্যাচার করে, আমাদের বাড়ির ভাড়াটেদের পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে আমাদের সম্পদ দখল করে নিয়েছে। এ ঘটনার জন্য জাজিরা থানায় অবিযোগ করলে ওসি ৭দিন পরে মামলা গ্রহন করে। কিন্তু আজো আমরা এর কোন সুবিচার পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত আমির হোসেন বেপারী বলেন, আমার ২১ শতাংশ ফসলী জমি নুর হোসেন ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলেছে। আমরা থানায় অভিযোগ করার পর আমাদের জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, উত্তর ডুবুলদিয়া গ্রামে আমাদের ৮১ শতাংশ পৈক্তিক জমিতে এবছর বিভিন্ন ধরনের রবি শস্য করেছিলাম। সেই জমির সকল ফসলসহ নুর হোসেন ড্রেজার দিয়ে জোর করে কেটে পুকুর করে ফেলেছে। আমরা নুর হোসেনের হাত থেকে আমাদের ফসলী জমি রক্ষার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
নুর হোসেন কাজী লেন, আমি আমার নিজের ক্রয়কৃত জমি থেকে মাটি কাটছি। ডারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা তাদের নিজেদের নামে কোন জমির দলিল পর্চা দেখাতে পারবেনা।
জাজিরা থানার ওসি মো. ইকরাম আলী মিয়া বলেন, এলাকাবাসী আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছে। একজন সাব ইন্সপেক্টরকে বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উভয় পক্ষের কাগজপত্র পরীক্ষা করে পরবর্তিত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
(কেএনআই/পিবি/ফেব্রুয়ারি ২২,২০১৫)