পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ড প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী পর জেলার আরেক মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান পলাতক আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়ার ঘটনায় তার জন্মস্থান পিরোজপুরের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

এলাকাবাসী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়ে মিছিল করেছেন।

কুখ্যাত মানবতাবিরোধী জব্বারের মামলার কার্যক্রম পুনরায় আপিল করে তার ফাঁসির রায়ের দাবি তুলেছেন তার নিজ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ যুদ্ধকালীন নির্যাতিত, ক্ষতিগ্রস্থ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত পরিবারের সদস্য ও বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগ- লুন্ঠন, জোড়পূর্বক ধর্মান্তরিতসহ একাধিক অপরাধের নির্দেশদাতা জব্বার রাজাকার ও তার দোশরদের সর্বোচ্চ শাস্তির অপেক্ষার এখনও প্রহর গুনছেন।

মঠবাড়িয়ার সদর ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা গ্রামের শহীদ সুরেন্দ্র নাথ মিত্রের পুত্র সঞ্জীব মিত্র বলেন, ‘এই রায় আমরা আদৌ সন্তষ্ট হতে পারেনি। ভগবানের কাছে আমরা তার (জব্বার) ফাঁসির প্রার্থনা করে আসছিলাম। সরকারের কাছে আকুল আবেদন রায়টি পুনর্বিবেচনার। ’

এদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার দাস বাচ্চু আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউই এই রায় সহজে মেনে নিতে পারেনি। মঠবাড়িয়ার নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই রায় ভেঙ্গে পড়েছেন। ’

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ দেবনাথ বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ঘোষিত ৫০ যুদ্ধাপরাধীর অন্যতম হলেন জব্বার ইঞ্জিনিয়ার। মঠবাড়িয়া জনপদের কলংক জব্বার রাজাকারের ফাঁসি হবে এমন আশা করেছিলাম কিন্তু এই রায় আমি মেনে নিতে পারছি না।

জব্বারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মঠবাড়িয়া উপজেলার কৃতি সন্তান ও মেধাবী ছাত্র গনপতি হালদারসহ ৮ ছাত্র হত্যা, গণহত্যা, হিন্দু অধ্যুসিত আঙ্গুলকাটা গ্রামের শহীদ যতীন্দ্র নাথ মিত্রের বাড়িসহ একাধিক স্থানে লুটপাট, ধর্মান্তরিত, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ছিল।

বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী মামলার আসামী পিরোজপুরের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ডসহ অন্যান্য আসামীদের বিচার কার্যক্রম শুরু এবং কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় কুখ্যাত এই মানবতাবিরোধী পিরোজপুরের জব্বার ইঞ্জিনিয়ার। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আত্মগোপনে থেকে পালিয়ে পরিবারসহ আমেরিকার ফ্লোরিডায় চলে যায় রাজ্জাকার জব্বার।

জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের নিজ বাড়ি উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাছিরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তার বসত ভিটা ও জায়গা-জমির প্রায় সবই বলেশ্বর নদের ভাঙ্গনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওই বাড়িতে বর্তমানে জব্বার পরিবারের কেউ না থাকলেও তার ভাইয়ের ছেলে আরমগীর হোসেন দেখাশুনা করছেন অবশিষ্ট জায়গা-জমি।

স্বাধীনতার পর রাজনীতিতে জড়িয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) এই নেতা দুইবার সংসদ সদস্য ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিলেন।


(এসএ/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫)