ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তামাকের চাষাবাদ । এ ভয়াল চাষে জড়িয়ে পড়েছে এলাকার নারী, শিশু ও কিশোররা।

এদিকে তামাক চাষ থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি অফিস কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, জেলার বেশির ভাগ উর্বর জমি এখন বিভিন্ন তামাক কোম্পানির দখলে। জেলাজুড়ে প্রায় ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে তামাক। আর জেলার ২ হাজার ২০০ কৃষক তামাক চাষে জড়িত। এছাড়া এ কাজে শ্রমের মূল্য অধিক হওয়ায় কৃষকরা তাদের পরিবারের নারী, শিশু ও কিশোরদের এ কাজে ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে যে বয়সে শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে তারা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি। সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় নারী, কিশোর ও শিশুরা তামাকের বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, বিষ দেয়া, পোড়ানো এমনকি তামাক বাজারজাতকরণের কাজে সহায়তা করছে। যাদের অর্থের বিনিময়ে শ্রম কেনার সামর্থ্য নেই সেই অভিভাবকরা তাদের নারী ও সন্তানদের এসব কাজে বেশি ব্যবহার করছেন। এসব অভিভাবকরা জানান, তামাক মৌসুমে মাঝে মধ্যে স্কুলে যায় তাদের শিশুরা। এই সময়ে স্কুলে গেলে লেবার নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু লেবারের মজুরি দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় তারা পরিবারের নারী, শিশু ও কিশোরদের এ কাজে ব্যবহার করছেন। অভিভাবকরা আরও জানান, তামাক চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি জানার পরও অন্যান্য রবি শস্যের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় তারা এটি চাষে জড়িয়ে পড়ছেন। এদিকে জেলার ১৩ শতাধিক কৃষক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ‘বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড’ (বিএটিবি) এর সঙ্গে তামাক চাষে চুক্তিবদ্ধ বলে জানা গেছ। চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা বীজ, সার ও কীটনাশক কোম্পানির কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পান। তাই কৃষকদের তামাক চাষে তেমন বিনিয়োগ করতে হয় না।ফলে অধিক মুনাফার জন্য কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। ঝিনাইদহের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অলোক কুমার সাহা জানান, তামাকের কাজ করার ফলে শিশু-কিশোররা গ্রিন ট্যোবাকো সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হয়। একদিন কাজ করলে ৫৪ মিলিগ্রাম নিকোটিন দেহে শোষণ করে যা ৫০টি সিগারেট পানের সমান ক্ষতি করে। ফলে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা তামাক কাজের আয় থেকে অনেক বেশি। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জয়নুল আবেদীন জানান, ঝিনাইদহে আগে তামাক চাষ কম হতো কিন্তুু বিভিন্ন কোম্পানি চাষের উপকরণসহ নগদ টাকা ও লোভনীয় প্রস্তাব দেয়ায় চাষাবাদ বেড়ে গেছে। তবে কৃষি অফিস তামাক চাষে কৃষকদের সবসময় নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে বলে যানা যায়।
(জেআর/পিবি/ফেব্রুয়ারি ২৬,২০১৫)