কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের হাওড় অঞ্চলের দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। এক সময়ে এ উপজেলার দেশীয় মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে জাতীয় পর্যায়ের বাজার বন্দরে বাজার জাতসহ পর্যাপ্ত মাছ বিদেশে রপ্তানী করা হত। এখন আর তা হয়না বললেই চলে। মাছের দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতায় এ উপজেলার সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিসাধনে ব্যর্থ হচ্ছে।

খামারের মাছই এখন বাজারগুলো দখল করে ফেলেছে। অভিজ্ঞ জেলেও গণ্যমান্য লোকজনের ভাষ্য হাওড় এ উপজেলা থেকে ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। ইতিমধ্যে বর্ষায় মৎস অধিদপ্তর থেকে দুইবার মাছ ছাড়া হলেও কোন প্রতিকার দেখা যায় না।

এক সময়ে দেশের মৎস ভান্ডার হিসেবে পরিচিত হাওড় উপজেলা অষ্টগ্রাম। অগণিত নদী বিরবাদার হাওরখালে পরিপূর্ণ ছিল। মিঠা পানিতে পরিপূর্ণএ উপজেলায় প্রায় ২৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। মাছের জন্য সুপ্রসিদ্ধ এ উপজেলায় দেশ বিদেশের লোকজন এসে মাছ শিকার এবং মাছের তৈরি সু-স্বাদু খাবার খেয়ে পরিবারের লোকজনের জন্য মাছ নিয়ে যেত। কিন্তু এখন আর তা নেই। নদী গুলোর নাব্যতা হ্রাস খাল বিল ভরাট করে কৃষি ক্ষেত অথবা বাড়ি ঘর তৈরি জলমহাল গুলোতে ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা, মাছের অভয় আশ্রয়স্থলের পার্শবর্তী জমি গুরোতে কীটনাশকের ব্যাবহারে মৎস্য সম্পদ উজার হয়ে গেছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ সৃষ্টি করে মাছের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিষ প্রয়োগে পাটি বাঁধে ও বিলের পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরণ কারেন্ট জাল মশারী জালে রেনুপোনা ও মাছ ধরার কারণে এ অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বিলুপ্ত হতে চলছে। বিলুপ্ত হওয়া প্রধান মাছ গুলোর মধ্যে রয়েছে, নানিদ মাছ, মাশুল মাছ, পাঙ্গাস মাছ, টাকিমাছ, কৈ মাছ, মাগুর মাছ, শিং মাছ, বাতাসী মাছ, গুং মাছ, রানী মাছ, পান মাছ, মৃগা মাছ, রিডা মাছ, খৈলিশা মাছ, বৈচা মাছ, কানলা মাছ, বামট মাছ, পাপদা মাছ, চেং মাছ, বাঘাইর মাছ, বেংরা মাছ, সিলুন মাছ, খল্লা মাছ, লাচ মাছ, এলগন মাছ, রামচেলা মাছ, গিলাকানি নাপিত মাছ ও গলদা চিংড়ি। এছাড়া ও বিলুপ্তির পথে প্রধান মাছ গুলোর মধ্যে রয়েচে ইালশ মাছ, মলা মাছ, রুই মাছ, কাতলা মাছ, বজরী মাছ, হালনী মাছ, ডান কানা মাছ,গুতুম মাছ, স্বরপুটি মাছ, চান্দা মাছ, ডিমা চিংড়ী, বাইম মাছ ও মেনি মাছ।

উপজেলার আব্দুল্লাপুর, রশীদগঞ্জ, বাজুকা, লাউরা, কদমচাল, আদমপুর, লাউরা, মহোনতলা, ইকুরদিয়া, বাংগালপাড়া, সাভিয়ানগর, কাস্তুল, অষ্টগ্রাম সদর, পূর্ব অষ্টগ্রাম ইত্যাদি বাজার হাট গুলো ঘুরে দেখা গেছে, খামারের মাছই বাজার ভরপুর। নদী ও হাওড়ে দেশীয় প্রজাতীর মাছ মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও এগুলোর দাম অত্যন্ত চড়া এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। খামারের মাছের দাম আনুপাতিক হারে কম। এ ব্যাপারে একাধিক মাছ বিক্রেতা কে জিজ্ঞাসা করা হলে এরা জানান দেশীয় প্রজাতীর মাছ খুবই কম পাওয়া যায় এবং দাম বেশি। এছাড়া ও ফড়িয়া ব্যাপাড়ীরা নদী ও হাওর থেকে এগুলো কিনে ভৈরব, কুলিয়ারচর, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ চালান করে দেয়। পরে রাজধানী শহর ঢাকা, চিটাগাং সহ জাতিয় পর্যায়ের বাজার গুলোতে এ মাছ বাজার জাত করা হয়ে থাকে।

এ ব্যাপরে অষ্টগ্রাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালমুন হাসান জানান, এ উপজেলার নদী গুলির স্বাভাবিক প্রবাহ এবং স্থানীয় একটি নদী ও হাওড়ের কয়েকটি বড় বিলের মৎস সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আমাদের দেশীয় মাছ গুলো বিলুপ্তির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।

(পিকেএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫)