বাগেরহাট প্রতিনিধি : দীর্ঘ তিন যুগ ধরে মন দেওয়া নেওয়ার পর নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসল প্রেমিক যুগল। এমনই সাড়া জাগানো প্রেমের বিয়ে দেখতে অসংখ্য উৎসুক লোকজন ভিড় জমায় কনের বাড়িতে। এ যুগের রজকিনী-চন্ডিদাস বলে অনেকে এই প্রেমিক যুগলকে আখ্যা দিয়েছেন। এমনই দীর্ঘদিনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে প্রেমিক জুটির এ বিয়ের ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী গ্রামে।

জানা গেছে, উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মৃত লোকনাথ বৈরাগীর ছেলে শুধাংশু বৈরাগীর সাথে পার্শ¦বর্তী খড়মখালী গ্রামের মৃত নিরোধ রায়ের কন্যা নিভা রাণী রায়ের সাথে স্কুল জীবন থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে কলেজ জীবনে এসে তাদের সম্পর্ক আরো পূর্ণতা পায়। এভাবে চলতে থাকে পরস্পরের সাথে মন দেওয়া নেওয়া। শিক্ষা জীবন শেষ করে দু’জনে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখলেও নানা সমস্যায় সেটি আটকে যায়। বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও নানা মতবিরোধ থাকার ফলে তাদের ঘর বাধার স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। আশায় বুক বেঁধে থাকে দু’জনে। এভাবে কেটে যায় প্রেমের প্রায় ৩৬টি বছর। শুধাংশু বৈরাগী বর্তমানে প্রায় ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন। এলাকায় স্বঘোষিত চিরকুমার সংঘটনের সভাপতি হিসাবে তার পরিচয় রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি । প্রেমিকা নিভা রাণীর বয়স এখন প্রায় ৫০এর কোঠায়। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকার কয়েকজন তরুণ জানান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপির বিয়ের পর থেকে বয়সের কথা না ভেবে এই প্রেমিক জুটির দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকার সচেতন মহলের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসেন। গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চলে দুই পরিবারকে বিয়েতে রাজি করানোর। অবশেষে সাড়া মেলে।

এই দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দুই পরিবারের সম্মতিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ১১টায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী অগ্নিকে স্বাক্ষী রেখে মালা বদলের মাধ্যমে প্রেমিকা নিভার বাড়িতে বসে ধুম-ধামের সাথে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এতদিনের সব বাধা-বিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তাদের দু’জনার বিয়ের মাধ্যমে জয় হল প্রেমের। এ সময় বিয়ে দেখতে দলে দলে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষ অনেকেই ছুটে আসেন। হৈচৈ পড়ে যায় চারিদিকে। বিয়ে বাড়িতে লোক দাঁড়ানোর তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিলনা। কনের বাড়িতে রাত জেগে বিয়ে দেখেন আগতরা। পাশাপাশি এ বিয়েকে ঘিরে মিষ্টি মুখ ও রঙ মাখামাখি চলে রাতভর। এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র কয়েক দিন ধরে চলছে এ বিয়ের আলোচনা এমনটি জানালেন কনের বাড়ির পাশের চা বিক্রেতা মো. আবু হানিফ। এলাকার শ্রেষ্ঠ প্রেমিক জুটি বলেও তারা এখন সুখ্যাতি পেয়েছে বলেও জানালেন অনেকে।

প্রেমিক শুধাংশুর নিকট আত্মীয় দেবাশীষ মন্ডল বলেন, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-চণ্ডিদাসের মত তাদের প্রেম কাহিনী এখন এলাকার লোকজনের মুখে মুখে। এমন প্রেমের বিয়ে আজকাল খুব একটা দেখা যায়না। বহু দিনের পুরনো প্রেম বলে কথা। শুধাংশু সময়মত বিয়ে করলে আজ তিনি নাতি-নাতনির মুখ দেখতেন। এতদিন ধরে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে এমন নজির খুব কম রয়েছে। রজকিনী-চণ্ডিদাসের প্রেম কাহিনীর চেয়ে তাদের এ প্রেম কোন অংশে কম নয় বলেও তিনি দাবি করেন’।

এছাড়া উপজেলার স্বঘোষিত চিরকুমার সংঘটনের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ কুমার বিশ্বাস এ বিয়ের খবর পেয়ে দারুণ ভাবে মর্মাহত হয়েছেন। তাকে বিয়েতে বার দাওয়াত দেওয়া হলেও তিনি উপস্থিত হননি বলেও জানান তিনি।

প্রেমিক শুধাংশু বৈরাগী জানান, তাদের প্রেম স্বার্থক হয়েছে। জয় হয়েছে ভালবাসার। নববধূকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চান। সত্যিকারের প্রেম কখনো বিফলে যায়না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রেমিক-প্রেমিকারা যেন কেউ ভুল করে কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয় এ ব্যাপারেও তিনি পরামর্শ দেন। নব দম্পতি সকলের দোয়া ও আর্শিবাদ প্রার্থনা করেছেন।

(একে/এএস/মার্চ ০১, ২০১৫)