আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অলৌকিক গুপ্ত ধনের আশায় অন্যের জায়গা দখল করে কালী মন্দির তৈরি করে নর বলি (মানুষ জবাই) দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে কথিত দুই ভণ্ড সাধক ও তাদের আশ্রয়দাতা পরিবার। ইতোমধ্যেই কালী ও মহাদেবের স্বপ্নাদেশের নামে গ্রামের সহজ সরল লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে স্বপ্নে প্রাপ্ত স্বর্ণালংকার প্রাপ্তির অভিনব প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ওই ভণ্ড সাধক ও আশ্রিত পরিবারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, অকারণে কোন লোকের প্রাণহানী হলে তার দায় কে নেবে ? ওই এলাকায় কথিত ধর্মের নামে এখনও মধ্যযুগীয় কুসংস্কার প্রথা চালুর অভিযোগে ওই পরিবারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যান্য ধর্মের সাধারণ লোকজন।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার গ্রামে মৃত নিত্যানন্দ বিশ্বাসের ছেলে বিমল বিশ্বাসের বাড়িতে তার বোনের ছেলে (ভাগ্নে) রংপুর এলাকার সন্তোষ দে’র ছেলে সমীর দে (২৫) ও তার বন্ধু নড়াইলের জনৈক বিমল (২৬) গত তিন মাস আগে আশ্রয় নেয়। তাদের চলা ফেরা ও আচরণ স্থানীয়দের কাছে ছিল রহস্যজনক। অধিকাংশ সময় তারা ওই বাড়ির অভ্যন্তরে থেকে মাদক সেবন করে নিজেদের এক জন শিব (মহাদেব) সাধক ও অন্যজনে মা কালীর সাধক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে ওই ভণ্ড সাধকদের সুরে সুর মিলিয়ে ওই বাড়ির মালিক তাদের আশ্রয়দাতা বিমল, ভাই কমল ও ধীরেন বিশ্বাসসহ পরিবারের সদস্যরা ঘোষণা করেন, বাড়ির পাশ্ববর্তি স্থানে পুরনো কালী মন্দিরে (অন্তত ৪০-৪৫ বছর পূজা হয়নি) পুনরায় মা কালী বিশ্বের অন্যতম মন্দির নিয়ে মাটি ফুঁড়ে স্বর্ণের মূর্তিসহ অচিরেই আবির্ভূত হবেন। তার আবির্ভাবের সময় বাড়ির আশপাশ এলাকায় দেখতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন স্বর্ণালংকার। পাশাপাশি মা কালী’র সন্তষ্টির জন্য যত তাড়াতাড়ি নর বলি (মানুষ বলি/জবাই) দেয়া যায় তত তারাতারি মা কালী আবির্ভূত হয়ে ওই পরিবারসহ এলাকাবাসীর মঙ্গল করবেন। ঘটনাটি এলাকায় চাউর হলে সম্প্রতি তারা এলাকার ধর্মপ্রাণ লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ওই পুরনো মন্দির ভিটিতে দিনের মধ্যে ঘর তুলে কালী পূজা দেয়। কথিত ওই সাধকসহ ওই পরিবারের পুরুষ মহিলারা গুপ্তধন প্রাপ্তির আশায় অব্যাহত ব্রত পালন শুরু করে। মাঝে মধ্যে তারা কবুতর কেটে তার রক্তও পান করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় শিব চতুর্দশী। কুসংস্কারে আছন্ন হয়ে ওই দিন বিশ্বাস পরিবারের নারী পুরুষেরা উপোষ থেকে শিব লিঙ্গের মাথায় জল না ঢেলে কথিত ওই ভন্ড শিবের মাথায় জল ঢেলে ব্রত পালন করে।

স্থানীয় মানিক দত্ত জানান, ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত তার ৪১ শতক জায়গা মেয়ে বিয়ের জন্য বিক্রি করতে চাইলে ওই জায়গা দখল করতেই কথিত সাধকদের সহাতায় বিমল বিশ্বাস গংরা মন্দির নির্মাণসহ বাঁশ-কাঠ দিয়ে আশপাশের এলাকা বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করে নেয়। তার ধারণা, ওই ভণ্ডরা এলাকায় বড় ধরনের কোন অপকর্ম করে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন এই এলাকায় আশ্রয় নিয়ে ধর্মের নামে প্রতারনা করছে।

গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই এলাকাসহ উপজেলায় টক অব দ্যা টাউন হয় যে, মাটির নীচ থেকে স্বর্ণালংকার ওঠা শুরু করেছে। ঘটনা দেখতে এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত নারী পুরুষেরা ভিড় জমায় বিমল বিশ্বাসের বাড়িতে। খবর শুনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামও পুলিশ নিয়ে হাজির হন ঘটনাস্থলে। তিনি জানান, দখল করা জায়গায় নির্মিত মন্দিরের ফাটা মাটির ফাঁকে কয়েকটি চুড়ি (অলংকার) দেখতে পান তিনি। ওই সময় কথিত সাধুর সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে বাড়ির লোকজন কথা বলতে দেয়নি। তারা তাকে জানায় দু’ঘন্টা ধ্যান ভগ্ন হলেই দেখা করা সম্ভব। পরে ওই সাধকসহ তাদের থানায় দেখা করার কথা বলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। এদিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে অলংকারগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় সেগুলো আসল নয়। সিটি গোল্ড। এব্যাপারে ওসি আরও জানান, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ভণ্ড সাধুকে তাৎক্ষনিক গ্রেফতার করা হয়নি। তবে ঘটনা তিনি নজরদারিতে রেখেছেন। সময়মত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ভণ্ডদের আশ্রয়দাতা বিমল বিশ্বাসসহ ওই পরিবারের লোকজন।

(টিবি/এএস/মার্চ ০৫, ২০১৫)