ভৈরব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সরকারি বরাদ্ধের সেচ পাম্প মালিকদের বিনামূল্যের বৈদ্যুতিক মিটার বিক্রি করছেন শিমুলকান্দি আবাসিক প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খান। সরকারের বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বিনামূল্যের ডিজিটাল এ মিটার ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন।

শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন গজারিয়া, শিমুলকান্দি, শ্রীনগর ও আগানগর ইউনিয়নের বৈদ্যুতিক মটর চালিত শতাধিক সেচ পাম্প মালিক কৃষকরা এ অভিযোগ করেন।

জানাযায়, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং বিভিন্ন ভূর্তকি দিচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে সারাদেশে ভৈরবে বৈদ্যুতিক মটর চালিত সেচপাম্প মালিকদের বিনামূল্যে ডিজিটাল মিটার সরবরাহ করা হয়। যাতে করে গড় বিল নামের অতিরিক্ত বিলের চাপ থেকে রেহাই পায় কৃষকরা। তাছাড়া প্রথম ধাপের দেয়া ডিজিটাল মিটার দ্রুত কৃষকদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি বিনা মূল্যের মিটার ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিসের প্রকৌশলী। তাছাড়া ২শ’ ৬০টির উপরে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প রয়েছে এ অফিসের আওতাধীন। কিন্তু গত ২ মাসে অর্থের বিনিময়ে মাত্র ৬০ জনের মত সেচ পাম্প কৃষক মিটার সংগ্রহ করেছেন। অথচ বিনামূল্যে এ মিটার পাবেন তা জানেনই না তারা। তাছাড়া তাদের কাছে বিষয়টি গোপন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ।

বুধবার সরেজমিনে গেলে সেচ পাম্প মালিক শ্রীনগর ইউনিয়নের কৃষক জালাল উদ্দিন জানায়, আমাদের সবাইকে আরি (প্রকৌশলী) বলেছেন মটরে মিটার সংযুক্ত করেন। তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। মিটার বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে তাই দিয়েছে।

একই ইউনিয়নের সালাম নামে আরেক সেচ পাম্প কৃষক জানায়, প্রথমে আমাদেরকে শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলা হয়েছে কোনো টাকা লাগবে না। কিন্তু এখন বলছে ৫ হাজার করে টাকা দিতে হবে। এই মুহুর্তে টাকা যোগাড় করতে পারিনি। তাই মিটার আনা হয়নি। বাশঁগাড়ি গ্রামের আরেক সেচ পাম্প মালিক কৃষক ওমর আলী বলেন, টেহা দিয়া অই তো মিটার আনছি। টেহা ছাড়া নাকি মিটার দিত না। আমার খুব কষ্ট হয়ছে এ টেহা যোগার করতে।

নাম প্রকাশে অনিহা ভূক্তভোগী বেশ কয়েকজন দাবী করে বলেন, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তিনি যোগদানের পর তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তারা।

অভিযোগের ভিত্তিতে শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিসে গেলে এর সত্যতা মেলে। কামারকান্দা গ্রামের জাকির হোসেন নামে এক কৃষকের হাতে অর্থের বিনিময়ে বিনা মূল্যের সরকারি মিটার তুলে দিচ্ছেন অফিসের সাহায্যকারী মিজানুর রহমান।

এসময় মিজানুর রহমানের কাছে মিটার বাবদ কোনো মূল্য নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে? তিনি জানান মিটারটি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার সামনেই কৃষক জাকির হোসেন বলেন মিটার নিতে আমাকে কয়েক হাজার দিতে হয়েছে প্রকৌশলীকে।

অভিযোগ অস্বীকার করে শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিস প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খান বলেন, সরকারি মিটার বিনামূল্যেই কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু মিটার সংযোগ স্থাপনের সময় কৃষকদের সাথে অফিসের কোনো অসাধু কর্মচারীর লেনদেন হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ জোনাল চীফ ইঞ্জিয়ার মো. রইচ উদ্দিন সরকার বলেন, বিনামূল্যের সরকারি মিটারগুলোর বিক্রি করার ইখতিয়ার কারোর নেই। অর্থের বিনিময়ে কৃষকদেরকে মিটার দেয়া হলে এর সত্যতা যাচাই পূর্বক অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ওএস/এটিআর/মার্চ ০৫, ২০১৫)