কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের মাজারে সাধুদের হাট ভেঙ্গে গেছে। সাধুরা যে যার আপন ঘরে ফিরছে। প্রথা অনুযায়ী শনিবার দিবাগত রাতে সব অনুষ্ঠান শেষের মধ্যে দিয়ে সাঙ্গ হয়েছে লালনের মিলন মেলা।

রবিবার সকালে আখড়াবাড়ী ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা অনেকেই আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে।

অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সমস্ত-নিগ্রহও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনস্ক সাধক লালন শ্রেণীহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন।

(কেকে/এএস/মার্চ ০৮, ২০১৫)