ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত দ্বিতল ভবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সর্বস্তুরের মানুষ। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ভবনটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। যে কোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা।

এলাকাবাসী জানায় শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় নির্মাণ করা হয় দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ভবন। ভবনটিতে ছিল ১০ টি শ্রেণী কক্ষ। ভবনটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ায় পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে ভবনটির বিভিন্ন অংশ খসে পড়ছে। ছাদ ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ইতি মধ্যে দরজা ও জানালা গুলো ভেঙে গেছে। তবুও বিদ্যালয় চলাকালীন অবস্থায় এই পরিত্যাক্ত ভবনে খেলাধুলা করছে এবং ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ভবনটির পেছনের দেয়ালের সাথে রয়েছে একটি মার্কেট। ভবন ধ্বসের আতঙ্কে রয়েছে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী সরিয়ে নিয়েছে তাদের দোকান। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় নয়শ। পরিত্যাক্ত ভবনটি ছাড়াও পাঁচটি শ্রেণীকক্ষ বিশিষ্ট আরও একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে এখানে। বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করায় এখন চরম শ্রেণীকক্ষ সংকটে পড়েছে বিদ্যালয়টি। একমাত্র ভবনটিতে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ না থাকায় একই কক্ষে দুজন শিক্ষক আলাদাভাবে ক্লাস নিচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। পরিত্যাক্ত ভবনের ভেতর দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক। এ বিদ্যালয় ছাড়াও গাড়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশের পথও এটা। এদিকে বিদ্যালয়টি পরিত্যাক্ত ঘোষণার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তা ভেঙে ফেলায় কর্তৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ। এতে করে স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অভিভাকরা প্রিয় সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আতঙ্কে থাকে।অভিভাবকরা জানান, “আমরা আমাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। যদি এ ভবন ধসে আমাদের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এর দায় কে নেবে? কেউ নেবে না। ফলে ক্ষতি আমাদেরই হবে।”বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, “প্রতিদিন আমরা এই পরিত্যাক্ত ভবনের নিচ দিয়ে আসা-যাওয়া করি। আমরা দেখি, বিভিন্ন সময় ভবনের প্লাস্টারসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। স্কুলে আমরা যত সময় থাকি খুব ভয় করে। আর এক রুমে একই সময় দুই ছার ক্লাস নেয় বলে আমাদেরও খুব সমস্যা হয়। আমরা ঠিকমত বসতে, পড়তে পারি না।”অন্যদিকে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্কুল শুরু ও ছুটি হলে এই ভবনের নিচ দিয়ে যাতায়াত করছে। ফলে ভবন ধসে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা। তাই দ্রুতই এ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করে এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানায় এলাকাসাবী।এব্যাপারে গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখলেচুর রহমান জানান, “বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য খুব দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর ভবনটি ভেঙে নতুন একটি দ্বিতল ভবন করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাইলেন তিনি।”তবে পরিত্যাক্ত ভবনটির ভেঙে ফেলার কথা বললেও নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে কি/না এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী রওশন ইসলাম। তিনি জানান, “আমি দেখেছি ভবনটি অত্যন্ত ঝুকিপুর্ণ। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বাঁশ দিয়ে ভবনটি ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, পাশাপাশি কাউকে যেন এই ভবনে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয় এজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে যে, এই ভবনের কারণে যদি কারও কোনো ক্ষতি হয় তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।তিনি আরও জানান, “ভবনটি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা হবে। শ্রেনী কক্ষের সংকট এখন আছে। তবে নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। প্রয়োজনে শিফট ভাগ করে ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এজন্য আমরা সব সময় সচেষ্ট আছি।”
তবে পরিত্যাক্ত ভবনটির ব্যাপারে বেশ কিছুদিন যাবত লেখালেখি করেও কতৃপক্ষের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
(জেআর/পিবি/মার্চ ১০,২০১৫)