আন্তাজর্তিক ডেস্ক : খুন বা খুনের চেষ্টা থেকে শুরু করে অপহরণ, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, কিছুই বাদ নেই৷ আবার জনসেবার বাসনা নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, এমন অনেকেই কোটিপতি!

সোমবার পঞ্চম এবং শেষদফার লোকসভা ভোট ভারতের পশ্চিমবঙ্গে৷ ভোট হবে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কলকাতা এবং পূর্ব মেদিনীপুর – রাজ্যের এই ছয় জেলার মোট ১৭টি লোকসভা আসনে৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮৭ জন প্রার্থী৷ নির্বাচনি সংস্কারের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করতে সচেষ্ট ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ' নামে এক নাগরিক সংগঠনের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, এই ১৮৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা বা অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে৷

সব থেকে বেশি অভিযোগ বিজেপি (৬ জন) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের (৫ জন) প্রার্থীদের বিরুদ্ধে৷ অবশ্য এই অভিযুক্ত তালিকায় ওঁদের ঠিক পরেই আছে ৪ জন সিপিআইএম এবং ৩ জন কংগ্রেস প্রার্থী৷ তবে বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী, বর্তমান সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরির বিরুদ্ধেই একমাত্র রয়েছে খুনের অভিযোগ৷ দুজন বিজেপি প্রার্থী, উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনের রাহুল সিনহা ও বারাসতের পি সি সরকার এবং দমদম লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী ধনঞ্জয় মিত্রের বিরুদ্ধে রয়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ৷

কোটিপতি ভোটপ্রার্থীদের মধ্যে বাকি সব দলের থেকে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস৷ ১২ জন কোটিপতি প্রার্থী তাদের৷ সবথেকে বিত্তবান কলকাতা দক্ষিণ এবং যাদবপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামলী দাশ৷ তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২,০০০ কোটি টাকার বেশি৷ তাঁর থেকে বরং অনেক পিছিয়ে আছেন ঘাটাল লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে চিত্রতারকা দেব৷ বাড়ি-গাড়ি নিয়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি৷ তৃণমূলের পরেই আছে বিজেপি, তাদের সাতজন কোটিপতি প্রার্থী৷ আর কংগ্রেস এবং সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়েছেন চারজন করে কোটিপতি প্রার্থী৷

এর ঠিক উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে আছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনের নির্দলীয় প্রার্থী সৌগত ঘোষ, যিনি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর কোনও সম্পত্তি নেই৷ একটি নয়া পয়সারও মালিক নন তিনি! তমলুক লোকসভা আসনে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ-এর প্রার্থী মাণিক চন্দ্র মন্ডলও জানিয়েছেন, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র এক হাজার টাকা৷ এর পাশাপাশি ৭৭ জন প্রার্থী নিজেদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাখিল করেননি৷ ২৭ জন নিজেদের প্যান নম্বর গোপন করে গিয়েছেন৷ তবে এর মধ্যে একটাই আশার কথা, এই দফার ১৮৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৭ জনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা তার থেকে বেশি৷

পশ্চিমবঙ্গের এই ১৭টি আসনের মধ্যে ১৫টিই তৃণমূল কংগ্রেসের জেতা আসন৷ বাকি দুটির একটি বহরমপুর, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরির বহু বছরের মৌরসিপাট্টা৷ এই আসনে রাজনৈতিকভাবে দূর্বল প্রাথী গায়ক ইন্দ্রনীল সেন-কে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল৷ কিন্তু অন্য আসনটি, অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটাল প্রবীণ সিপিআই নেতা বাসুদেব আচারিয়ার হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য এবার ঝাঁপিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একেবারে নিজস্ব কায়দায় বামপন্থিদের সাংগঠনিক শক্তির মোকাবিলা করতে তিনি দলের প্রার্থী করেছেন বাংলা ছবির সুপারস্টার দেব-কে৷ রাজনৈতিক প্রভাব না ফিল্মি জনপ্রিয়তা, ঘাটালের মানুষ কোন দিকে রায় দেন, সেটাই এখন দেখার৷

ভোটের ঠিক আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর, রাজ্যের শেষ দফার ভোটে তার কী প্রভাব পড়বে, সে দিকেও এখন তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল৷

(ওএস/এটি/মে ১১, ২০১৪)