হুমায়ূন কবির জীবন : পৃথিবী নামক গ্রহে মানুষের পদচারণায় আন্তরিকতা আর ভালবাসায় এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে কয়েক হাজার বছর আগেই। এই গ্রহ দিন দিন আরো বেশি বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেই গ্রহের সুন্দর একটি দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আর অপূর্ব প্রকৃতির হাতছানির এক অপূর্ব মিশেল। বাংলাদেশ হ্যাঁ এই বাংলাদেশের রূপ সুধাপান করতে চেয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। মার্কিন মূলকের কাজে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত এই কর্তাব্যক্তি ঢাকার বাইরে যেতে পারেন না। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে আমি আপনাদের বাংলাদেশকে ঘুরে দেখতে চাই। সাদরে সম্মতি জানিয়েছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ঘুরে দেখলেন। মনের স্বাদ মেটালেন। কিন্তু ঘুরে দেখে তা আর বর্ণনা করতে পারলেন না রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনি (রাষ্ট্রপতি জিল্লূর রহমান) চলে গেলেন জীবনের পরপারে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫শ ৭০ কিলোমিটার আয়তনের ৬৪ জেলার দেশ বাংলাদেশকে ঘুরে দেখতে বের হলেন। সফরের সর্বশেষ পছন্দের জেলা কুমিল্লা।

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে খবর পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত, শিহরিত, পুলকিত আমি। আমেরিকা সেতো অনেক দূর। বাংলাদেশ আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যিনি কাজ করেন তিনি কুমিল্লায় আসবেন, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ শুক্রবার দেশের পূর্বাঞ্চলের ছয়টি জেলা পরিদর্শন শেষে কুমিল্লা কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এমন সংবাদ পেয়ে আমাকে জানালেন সিনিয়র তথ্য অফিসার মীর হোসেন আহসানুল কবির। পরে আমি কোটবাড়িতে গিয়ে ছবি সংবাদ সংগ্রহ করতে কোন বাধা দিবে কিনা এমন প্রশ্ন করি তথ্য অফিসারের কাছে। তিনি বলেন, সদর দক্ষিণের নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার ভূমি মো: সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে দেখেন। সদর দক্ষিণের এ কর্মকর্তার সাথে কথা বলি। তিনিও বলেন, আমি আসলে বলতে পারছি না। ড্যান মজিনার সফরসঙ্গী ফিরোজ আহমেদ সাথে কথা বললে বিষয়টি জানতে পারবেন। তার ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলি সফর সঙ্গী ফিরোজ আহমেদের সাথে। তিনি কথা বলার পর দিলেন হেড অব প্রেস মেরিনা ইয়াসমিনের কাছে। তখন তিনি বললেন উনার ছবি ভিডিও করা যাবে দূর থেকে। তবে তিনি কোন বক্তব্য দেবেন না কোটবাড়ি শালবন বিহার এলাকায়। পর দিন প্রেস ব্রিফিং আছে কথা বলবেন। ঠিকআছে বলে ফোনটি রেখেদিলেন। তখনই ছুটলাম চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা পার্সন সাইফুল ইসলাম সুমন, কুমিল্লার কাগজের স্টাফ রিপোর্টার মনির হোসেনকে নিয়ে কোটবাড়ি শালবন বিহার। বাসা থেকে বের হয়ে আমি অন্যদিন অফিসে এসে দুপুরে খাবার খাই। অথচ সেইদিন অফিসে আসলে দেরি হয়ে যাবে এটা ভেবে কোটবাড়ি চলে যাই। সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। সাড়ে ৪টায় আসলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলামুর রহমান। তিনি এসে করমর্দন করেন। পরে তিনিও ড্যান মজীনার জন্য কোটবাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন। সংবাদ কর্মীদের মধ্যে প্রথম আলোর এম সাদেক ও ফটো সাংবাদিক এন কে রিপন এবং আমি অপেক্ষা করতে করতে এক পর্যায়ে শালবন বিহারের ভিতর ফ্লোরে বসে পড়ি। আমরা এই তিনজন বসে ভাবছি অন্ধকার হয়ে আসলো। কিন্তু মি. মজীনা আসলে ছবি তুললে পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ঐতিহ্যটাকে তুলে ধরতে পারবো না। তবুও পত্রিকার জন্য ড্যান মজীনার ছবি গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক প্রতিক্ষার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় আসলেন যার অপেক্ষায় সময় কাটালাম সেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। গাড়ি থেকে নামার পরই তিনি এখানকার কর্মকর্তাদের সাথে করমর্দন করেন। এসময় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ছবি তোলার জন্য। তবে ড্যান মজীনার নিরাপত্তা রক্ষী তাদের হাতে ছোট ছোট টর্চলাইট দিয়ে ধরে রাখছে। দূর থেকে ছবি তোলার জন্য বলছেন। কাছে গিয়ে ছবি তুলতে দিচ্ছেন না। অনেক চেষ্টা করে শালবন বিহারে সবুজ এবং লালমাটি দেখছেন ড্যান মজীনা এমন ছবি তুলি। তারপরই তিনি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। সেখানে কিছু ছবি তুলি। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষী সকল মিডিয়া কর্মীদের ছবি না তোলার জন্য অনুরোধ জানান। তারপরই চলে আসি কুমিল্লার কাগজ অফিসে। এসে ঢাকার কয়েকটি মিডিয়ায় ছবি ও সংবাদ পাঠাই। পরে অফিসের নিচে হোটেল কস্তুরিতে দুপুরের খাবার খাই। ঐ সময় খবর পাই সার্কিট হাউসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল ও পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীর সাথে মতবিনিময় করছেন।
পরদিন শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। যখন হলরুমে রাষ্ট্রদূতের প্রবেশ ঘটল তার হাসিমাখা মুখ দেখে সবার খুব ভাল লাগল। ঘন্টাব্যাপি মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সাথে ফটোসেশন করা হল। পুলিশ প্রশাসন গার্ড অব অনার দিলো। ড্যান মজীনা মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য আমরিকান চেম্বার্স অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু ভাইয়ের বাসায় যান। হাসিখুশি আর প্রাণোচ্ছ্বলতায় ভরপুর ড্যান মজীনা খুব ভাল করে আতিথিয়তা গ্রহণ করলেন। তার মধ্যাহ্ন ভোজের আগে ড্যান মজীনার সাথে কথা বলা ও ছবি তোলার সুযোগ করে দেন। আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পর্কে অবগত করান মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে। এসময় তার হাতে কুমিল্লার কাগজ পত্রিকাটি তুলে দেয়া হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পত্রিকা দেখে হাসি দিয়ে কুমিল্লা কাগজে ছাপা হওয়া ছবিটি মনোযোগ সহকারে দেখেন। তারপর আমি ড্যান মজীনা এবং অতিথিদেরকে নিয়ে একটি ফটোসেশন করি। আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু ভাইয়ের সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে আমিও অংশগ্রহণ করি। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ হওয়ার পর ড্যান মজীনার কুমিল্লার সফরকে স্বাগত জানিয়ে কেক কাটা হয়। কেক কাটার পর বিশিষ্টজনরা ড্যান মজীনার সাথে বিশেষ বিশেষ কিছু ছবি তুলেন। সে সুযোগ আমিও হাতছাড়া করিনি। অবশেষে তারপাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে বন্দি হলাম স্মৃতির ফ্রেমে। গায়ের সাথে গা লেগে বসে ছবি তুললাম। আমার গালে হাত দিয়ে ইংরেজিতে যা বললেন, তার মর্মার্থ ‘হে সুদর্শন যুবক তোমার পত্রিকা খুব সুন্দর, তোমার তোলা ছবি সুন্দর’। একজন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে পাওয়া এমন মন্তব্য আমার সাংবাদিক জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পাওয়া বলে মনে হয়েছে। তবে এ সুযোগটা হয়তো পেতাম না যদি আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু ভাই আমাকে তার বাসায় আমন্ত্রণ না জানাতেন।

কুমিল্লার বিশিষ্টজন প্রফেসর আমির আলী স্যার, কুমিল্লা ক্লাবের সিনিয়র সভাপতি হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক, ক্লাব সেক্রেটারি আবদুল হান্নান, ডা. আবু আইয়ুব হামিদ, এড কিরণময় দত্ত, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুল, কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশিক অমিতাভ, সাংবাদিক বাকিন রাব্বি ভাইয়া অনেক আন্তরিকভাবে ড্যান ডব্লিউ মজীনার সাথে কথা বলেন। তারাও ড্যান মজীনার সাথে ছবি তুলেছেন। সবাই রাষ্ট্রদূতের প্রাণোচ্ছ্বলময় সরলতায় মুগ্ধ হন। বিদায় বেলায় ড্যান মজীনাকে কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কিছু উপহার দেন আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় সকলের সাথে অনেক আন্তরিক হয়ে করমর্দন এবং কূশল বিনিময় করেন। যখন তিনি চলে যাচ্ছেন তখন অনেককে দেখলাম মজীনার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। মজীনাও গাড়ি থেকে সকলের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বিদায় জানালেন। ওই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম ড্যান মজীনায় দু’দিন সফরের প্রথম দিন অনেক অপেক্ষায় ছিলাম। পরদিন অনেক কাছে পেলাম। সত্যিই সময় চলে যায় থেকে যায় শুধু মানুষের স্মৃতি।