বরগুনা প্রতিনিধি : অসুস্থদের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া-আনার জন্যে দেশ-বিদেশে চালু রয়েছে সরকারি-বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। তবে এসব এ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করতে কিছুটা ভাল এবং প্রশস্ত সড়কের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি আর্থিক খরচও কম নয়।

কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে কম খরচে এবং সরু (ছোট) সড়কে যাতায়াত উপযোগী এ্যাম্বুলেন্স এখনও চোখে পড়েনি। তবে এ ধরনেরই একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স আবিস্কার হয়েছে বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নে। ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এই এ্যাম্বুলেন্সটি তৈরি করা হয়েছে। এক লিটার পেট্রোল দিয়ে অন্তত ৫০ কি.মি. পথ যাতায়াত করা যাবে। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া। এটির নাম দেয়া হয়েছে গ্রামীণ মোটর এ্যাম্বুুলেন্স “হাসি”। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নামের অংশ এবং এ সার্ভিস-এ সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটবে এমন পরিকল্পনায় এ্যাম্বুলেন্সটির নাম রাখা হয়েছে “হাসি”। বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এটির উদ্বোধন করেন, বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম।

সূত্র জানায়, ইউনিসেফের সহযোগিতায় এলসিবিসিই কার্যক্রম ধারাবাহিকতায় গত বছরের শেষ দিকে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের মা ও শিশুদের উন্নয়নে বাধাসমূহ চিহ্নিত করে। এতে গর্ভবতীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা সদর হাসপাতালে পরিবহন সংকটের বিষয়টি উঠে আসে। পরিবহন সংকটের কারণে অনেক মায়েরা সময় মতো চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে না। এতে অনেক মা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মাতৃস্বাস্থ্য। সরকারের সীমিত সম্পদের মধ্য থেকেও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাতে সফলতা অর্জন হয়েছে চোখে পড়ার মতো।

এ্যাম্বুলেন্সটির মূল পরিকল্পনাকারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, উপকূলীয় এলাকার মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো এবং সেবাকেন্দ্রে প্রসব সেবা নিশ্চিত করানোর জন্যে এ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নে এই এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি চালু করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আয়লা পাতাকটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, গ্রামীণ জনপদে যেখানে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারে না সেখানে হাসি সহজেই পৌঁছাতে পারবে। এতে খরচও কম। স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের সঙ্গে বেড যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে হাসি। এটি তৈরিতে মোট দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মো. রুস্তুম আলী বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিরাপদ প্রসব সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করবে হাসি।

জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সনের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জনেও বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে দুই তৃতীয়াংশ সড়ক কাঁচা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত সেখানে হাসি নির্বিঘ্নে অল্প সময়ে প্রসবকালীন মাতৃসেবা পৌছাতে সক্ষম।

(এমএইচ/এএস/মার্চ ১৩, ২০১৫)